বাজেট বক্তৃতায় মূল্যস্ফীতি মোকাবিলাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী, কিন্তু তা মোকাবিলায় প্রস্তাবিত পদক্ষেপ পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বাজেটের আগে সিপিডির প্রস্তাব ছিল, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য যেমন চাল, চিনি ও গম থেকে শুল্ক তুলে দেওয়া। কিন্তু অর্থমন্ত্রী শুধু গম আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছেন।
বৃহষ্পতিবার (০৯ জুন) সন্ধ্যায় বাজেটের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেছেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সিপিডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশে বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাস্তবতায় সরকারের উচিত ছিল, করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি করা। কিন্তু তা না করে বাজেটে বরং বেতন বহির্ভূত অন্যান্য ভাতার করমুক্ত সীমা পাঁচ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১০ লাখ টাকা করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের সঙ্গে দরিদ্র মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই, বরং উচ্চ মধ্যবিত্ত মানুষেরা এতে উপকৃত হবেন।
অর্থমন্ত্রী কৃষি খাতে ভর্তুকি বৃদ্ধির যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তাকে সাধুবাদ জানিয়েছে সিপিডি। তারা মনে করে, এই সময় মানুষকে স্বস্তি দিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ভর্তুকি বৃদ্ধি করা উচিত ছিল। কিন্তু অর্থমন্ত্রী গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য সময়-সময় সমন্বয় করার ইঙ্গিত দিয়েছেন, অর্থাৎ ভবিষ্যতে এসবের মূল্য আরও বাড়বে। এতে দরিদ্র মানুষেরা বিপাকে পড়বেন।
মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে যেখানে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা দরকার ছিল, সেখানে বরং এবার বরাদ্দ কমানো হয়েছে। পরিমাণ ও অনুপাত-উভয় দিক থেকেই তা কমানো হয়েছে। গত বছর যেখানে জিডিপির ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল এ খাতে, সেখানে এবার ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় মানুষকে স্বস্তি দিতে ভাতা বাড়ানো দরকার ছিল, কিন্তু এই বাস্তবতায় বরাদ্দ হ্রাস করা হলো। খোলাবাজারে বিক্রি কমানো হয়েছে।
কর আহরণে নতুন উদ্যোগ নেই বাজেট বক্তৃতায়। করপোরেট কর হ্রাস করায় ব্যবসায়ীদের হয়তো সুবিধা হবে, কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে দরিদ্র মানুষের জীবনে এর প্রভাব পড়বে না বরে মন্তব্য করেন ফাহমিদা খাতুন।
এছাড়া পাচার হওয়া টাকা ফেরতের যে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, তা অনৈতিক বলে মনে করে সিপিডি।
সামগ্রিকভাবে সিপিডি মনে করে, বাজেটে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা ঠিক, কিন্তু বাস্তবায়নের যে পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, তা অপরিপূর্ণ। নীতি কৌশল যা নেওয়া হয়েছে তা অসম্পূর্ণ এবং বিদ্যমান চ্যালেঞ্জের সাপেক্ষে অপর্যাপ্ত।
অর্থসূচক/এমএস



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.