তৃতীয় লিঙ্গ-প্রতিবন্ধীদের নিয়োগ দিলে কর ছাড়

বাজেট ২০২২-২৩

‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’এই শিরোনামকে সামনে রেখে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার (০৯ জুন) জাতীয় সংসদে এই বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী ।

বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজটে তৃতীয় লিঙ্গ ও প্রতিবন্ধীদের অর্থনীতির মূলধারায় অন্তর্ভুক্তির জন্য আরও বেশি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার দেশের প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সমাজ এবং অর্থনীতির মূলধারায় অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অন্যতম একটি বৃহৎ অংশ হচ্ছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। এ জনগোষ্ঠী অন্যদের চেয়ে আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে আছে এবং তারা সমাজের মূলধারার বাইরে রয়েছে। কর্মক্ষম ও পিছিয়ে পড়া এ জনগোষ্ঠীকে উৎপাদনমূখী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে পারলে সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের কর্মসংস্থান, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক আত্তীকরণের লক্ষ্যে বর্তমানে চালু করা বিশেষ কর প্রণোদনাকে আরও প্রসারিত করার প্রস্তাব করেছেন মন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবনা অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠান ২৫ জন তৃতীয় লিঙ্গ-প্রতিবন্ধীকে নিয়োগ দিলেই পাবেন বিশেষ কর ছাড়। আগে ১০০ জন তৃতীয় লিঙ্গ-প্রতিবন্ধীকে নিয়োগ দেওয়া হলে এই কর ছাড় পাওয়া যেত। কোনো প্রতিষ্ঠান তার মোট কর্মচারীর ১০ শতাংশ বা ২৫ জনের অধিক প্রতিবন্ধী বা তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের নিয়োগ দিলে ওই কর্মচারীদের পরিশোধিত বেতনের ৭৫ শতাংশ বা প্রদেয় করের ৫ শতাংশ যেটি কম তা নিয়োগকারীকে কর রেয়াত হিসেবে দেওয়া হবে।

বর্তমানে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মোট জনবলের ন্যূনতম ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগ করলে ওই করদাতাকে প্রদেয় করের ৫ শতাংশ কর রেয়াত দেওয়া হয়। এছাড়া যদি কোনো প্রতিষ্ঠান তার মোট কর্মচারীর ১০ শতাংশ বা ১০০ জনের অধিক তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয় তবে উক্ত কর্মচারীদের পরিশোধিত বেতনের ৭৫ শতাংশ বা প্রদেয় করের ৫ শতাংশ, যেটি কম, তা নিয়োগকারীকে কর রেয়াত হিসেবে অনুমোদনের বিধান চালু রয়েছে।

এই বিধান সংশোধন করে উভয় ক্ষেত্রে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান তার মোট কর্মচারীর ১০ শতাংশ বা ২৫ জনের অধিক প্রতিবন্ধী বা তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয় তবে উক্ত কর্মচারীদের পরিশোধিত বেতনের ৭৫ শতাংশ বা প্রদেয় করের ৫ শতাংশ, যেটি কম তা নিয়োগকারীকে কর রেয়াত হিসেবে অনুমোদনের প্রয়োজনীয় বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।

আজ বাজেট উপস্থাপনের পর নিয়ম অনুযায়ী প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সংসদ সদস্যরা আলোচনা করবেন। এরপর আগামী ৩০ জুন প্রস্তাবিত বাজেট পাশ হবে। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বাংলাদেশের ৫১তম বাজেট এটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের চতুর্থ বাজেট এটি। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি চতুর্থ বাজেট।

স্বাধীনতা-পরবর্তী ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশে মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট দেন তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৭২ সালের ৩০ জুন ওই বাজেট পেশ হয়। তাজউদ্দীন আহমদ ওই দিন একই সঙ্গে ১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর, অর্থাৎ দুই অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। এরপর আরও দুবার বাজেট দেন তাজউদ্দীন আহমদ, সেটি সবশেষ দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৪ কোটি টাকার।

১৩ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার বাজেট দিয়েছেন সদস্য প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও এম সাইফুর রহমান। দুজনেই ১২টি বাজেট উত্থাপন করেছেন। তবে আবুল মাল আবদুল মুহিতই আওয়ামী লীগের হয়ে টানা ১০ বার বাজেট পেশ করেছেন। তিনি প্রথম বাজেট দেন ১৯৮২-৮৩ সালে, এরশাদের শাসনামলে। সেটার আকার ছিল ৪ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। আর সবশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তার বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.