আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আর আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (০৯ জুন) জাতীয় সংসদে ‘কোভিড অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামে বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী। সংসদ অধিবেশন শুরুর পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর অনুমোদনক্রমে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এতে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
বাজেট উপস্থাপনকালে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস হতে বাজেট ঘাটতি পূরণ করা হবে। ঘাটতি পূরণের একটি রূপরেখাও দিয়েছেন তিনি।
বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এবার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট বাস্তবায়ন করতে আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি বাজেট (অনুদানসহ) হবে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির অঙ্ক দাঁড়াবে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এ বছর বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার আশা করা হচ্ছে ৩২৭১ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান পরিশোধ করতে হয় না। এ জন্য এটি সরকারের আয় মনে করা হয়।
এই ঘাটতি মেটাতে অর্থমন্ত্রী ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণ করা হবে ৯৫ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা। অন্যান্য খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৫ হাজার ১ কোটি টাকা।
বিগত বছরগুলোয় বাংলাদেশের ঘাটতি বাজেট ৫ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে করোনার কারণে গত দুই (২০২০-২১ ও ২০২১-২২) অর্থবছরে সেটি ৬.২ শতাংশের সীমাও ছাড়িয়ে যায়। সেটিকেও অর্থনীতিবিদরা সময়ের বাস্তবতা বলে মনে করেছেন।
এবার সেই অভিঘাত কিছুটা কমে এলেও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধাবস্থার কারণে বিশ্বে নতুন করে শুরু হয়েছে অর্থনৈতিক অস্থিরতা। তার প্রভাবও পড়েছে বাংলাদেশে। ফলে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি এবং উচ্চ মুল্যস্ফীতি থেকে সুরক্ষা দেয়ার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, কর্মসংস্থান ও আয়বর্ধক উদ্দীপক কর্মসূচি নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই ঘাটতি বাজেটের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়েছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যের বিভিন্ন অংশের আলোচনায়।
অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতি মেটাতে চ্যালেঞ্জ থাকলেও বাস্তবায়ন পর্যায়ে তিনি তা সমন্বয় করতে সক্ষম হবেন।
যদি সরকারের ব্যয়ের চেয়ে আয় কম হয়, তাহলে তাকে ঘাটতি বাজেট বলে। সরকারি ব্যয় ও আয় সমান থাকলে সেটি সুষম বাজেট এবং ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি হলে তাকে উদ্বৃত্ত বাজেট বলে। অর্থনীতিবিদরা এই ঘাটতি বাজেটকে ‘সময়ের বাস্তবতা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেটে আয়-ব্যয়ের মধ্যে ঘাটতি রাখা হয় অনুদানসহ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ দশমিক ১ শতাংশ, যা টাকার অংকে ছিল মোট ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে অনুদান ব্যতীত এই ঘাটতি রাখা হয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ দশমিক ২ শতাংশ, যা টাকার অংকে ছিল মোট ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে মোট ব্যয়ের আকার কাটছাঁট করে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকায়। এতে করে শেষ পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়নে ঘাটতির আকারও কমে আসে। অনুদানসহ নতুন ঘাটতি দাঁড়ায় ২ লাখ ১ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা, যা জিডিপির শতকরা হিসাবে এর ৫ দশমিক ১ শতাংশ এবং অনুদান ছাড়া ২ লাখ ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির শতকরা হিসাবে এর ৫ দশমিক ১ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদরা বলেন, ঘাটতি বেশি হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নাই।কেননা বর্তমানে সংকট উত্তরণে এখন আমাদের বেশি বেশি খরচ করতে হবে। তবে বৈশ্বিক অস্থির পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সুরক্ষিত রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় যতোটা সম্ভব বিদেশি ঋণ কম নিয়ে বিদেশি অনুদান আনার চেষ্টা বেশি করতে হবে। একই সঙ্গে বাজেটের টাকা সঠিকভাবে ব্যয় করতে হবে সামাজিক সুরক্ষামুলক বিভিন্ন খাতে। বাড়তি বিনিয়োগ করতে হবে উৎপাদন বৃদ্ধি, মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং জরুরি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অবকাঠামো খাতে। এর ফলে মানুষের সক্ষমতা বাড়বে এবং নতুন নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
অর্থসূচক/এমএস/এমএস



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.