করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) অতিমারির ধাক্কা সামলে উঠার আগেই নতুন সঙ্কটে পড়েছে গোটা বিশ্ব। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানী তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বেড়ে তুঙ্গে উঠেছে। বেড়ে গেছে খাদ্য পণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের দাম। বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড গড়েছে। এমন এক বিশেষ পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে উন্নয়নের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে ঘোষিত হয়েছে আগামী অর্থবছরের (২০২২-২৩) জাতীয় বাজেট। এই বাজেটে প্রধান চ্যালেঞ্জ থাকবে মূল্যস্ফীতির আগুন নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
আজ বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল।
বাজেটের আকার
আগামী অর্থবছরের বাজেটের মোট আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ১৪ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) মূল বাজেটের চেয়ে ৭৪ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা বেশি । চলতি অর্থ বছরের মূল বাজেট ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। আর সংশোধিত বাজেটের আকার ৫ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়
আগামী অর্থবছরের মোট বাজেটের শতাংশ ব্যয় হবে পরিচালন তথা রাজস্ব খাতে। বাকী শতাংশ যাবে উন্নয়ন খাতে।
ঘোষিত বাজেটে পরিচালন খাতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ লাখ ১১ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আবর্তক ব্যয় ৩ লাখ ৭৩ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীন ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৭৩ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা। আর বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা লাগবে।
প্রস্তাবিত পরিচালন ব্যয় চলতি অর্থ বছরের চেয়ে ৪৯ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যদিও তা সংশোধিত বাজেটে বেড়ে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা হয়েছে।
২০২২-২৩ আর্থবছরের ঘোষিত বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা উন্নয়ন ব্যয়ের চেয়ে কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা আছে ২ লাখ ২১ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা।
বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটের এডিপি বরাদ্দের চেয়ে ৩৬ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা বেশি।
রাজস্ব আয়
আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি আর্থবছরের বাজেটে রাখা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে রাজস্ব আহরণ ১১ দশমিক ৩১ শতাংশ বাড়াতে হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের করসমূহ থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বছরের চেয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি। অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বহির্বূত কর থেকে আয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা।
বাজেট ঘাটতি
প্রতিবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও রাজস্ব আয়ের চেয়ে সামগ্রিক ব্যয় হবে বেশি। তাতে বাজেটে থাকবে ঘাটতি। প্রস্তাবিত বাজেটে বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ১৪ কোটি টাকা (বৈদেশিক অনুদান ব্যতিত)। ঘাটতির হার জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয় ২ লাখ ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ১ শতাংশ।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি বাড়ছে ৭২ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা।
অন্যদিকে বৈদেশিক অনুদান বিবেচনায় নিলে বাজেট ঘাটতি হবে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৪০ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার অর্থসংস্থান করা হবে রাজস্ব আহরণের মাধ্যমে। বাকী অর্থ আসবে বৈদেশিক অনুদান এবং অভ্যন্তরীন ও বৈদেশিক ঋণ থেকে। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ থেকে পাওয়া যাবে ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকার যোগান দেওয়া হবে।
মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা
আগাশী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বিদ্যমান চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরবরাহ বাড়ানো।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.