সামগ্রিকভাবে দেশের বাজার ব্যবস্থায় দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ পর্যাপ্ত মনে হচ্ছে না। বাজারে কারা কী করছে তা নজরদারিতে রাখা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে প্রতিযোগিতা কমিশন, ভোক্তা অধিদপ্তরকে আরো সক্রিয় করা জরুরি। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও যুক্ত করার পরামর্শ দেয় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসির (সিপিডি)। চলতি অর্থবছরের সার্বিক অর্থনীতি পর্যালোচনায় নিয়ে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এই পরামর্শ দেন সিপিডির গবেষকেরা।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে রোববার (০৫ জুন) এই মিডিয়া ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল বক্তব্য পাঠ করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, গবেষক সৈয়দ ইউসুফ সাদাত প্রমুখ।
এসময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর শুল্ক ও কর সাময়িক সময়ের জন্য তুলে দেওয়ার পরামর্শ জানিয়েছে সিপিডি। সেইসঙ্গে মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে আগামী বাজেটে জ্বালানি ও কৃষি খাতে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দেওয়ার পরামর্শ দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
মূল প্রবন্ধে ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রবৃদ্ধি যেটা হচ্ছে সেটা কোথা থেকে হচ্ছে, এটা বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। জিডিপির হিসাব বাস্তবসম্মত করা দরকার। কারণ নীতিমালা যেগুলো নেওয়া হয় সেগুলো জিডিপির বিভিন্ন সহগের ওপর নির্ভরশীল। জিডিপির হিসাব সঠিক না হলে নীতিমালা কার্যকর হয় না। জিডিপি নিয়ে আমাদের দুর্বলতা রয়েছে। তবে জিডিপির বন্টন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়ন অন্তর্ভুক্তিমূলক হলো সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের সম্পর্ক আছে। তবে সে কারণে পণ্যমূল্য বাড়ছে বললে ভুল হবে। শুল্ক কীভাবে নির্ধারিত হচ্ছে? সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে শুল্ক কমানোর পর কিছুটা সুফল পাওয়া গেছে। আমদানি ও উৎপাদক পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যায়ের পৌঁছানোর ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা আছে। সেখানে নজরদারি ও খবরদারি করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেও পণ্যের দাম কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা দেওয়া যুক্তিহীন বলে মন্তব্য করেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা কমানোর সময় এসেছে। মাসে খোলা বাজার ও ব্যাংক মাধ্যমে ডলারের দামের পার্থক্য ১০-১২ টাকা ছিল। এখন পার্থক্য কমে এসেছে। ফলে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার কোনো কারণ দেখি না।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় চিড় ধরেছে। তবে এর মূল কারণ বহিস্থ, ঠিক অভ্যন্তরীণ নয়। এক্ষেত্রে সরকারের হাতে যেসব হাতিয়ার আছে, যেমন রাজস্ব নীতি ও মুদ্রানীতি যথাসম্ভব ব্যবহার করা উচিত, এবং বাজারের যেসব ঘাটতি আছে, সেগুলো দূর করার উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন ।
তিনি বলেন, শুধু ডলার সংকট নয়, দেশে এখন মূলস্ফীতির হারও বাড়তি। কিছুদিন আগে ভোজ্যতেলে সংকট দেখা গেল, তারপর ভোজ্য তেলের দাম অনেকটাই বেড়ে গেছে। ফলে সামগ্রিকভাবে দেশের বাজার ব্যবস্থায় দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। এটাকে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ পর্যাপ্ত মনে হচ্ছে না। তার পরামর্শ, বাজারে কারা কী করছে তা নজরদারিতে রাখা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে প্রতিযোগিতা কমিশন, ভোক্তা অধিকার সমিতিকে সক্রিয় করা জরুরি। আবার শুধু সরকারি নয়, বাজারে বেসরকারি খাতের নজরদারিও হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বিলাসদ্রব্য আমদানি নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি মুদ্রার অবমূল্যায়ন করেছে। প্রথমে ডলারের দাম বেঁধে দিলেও শেষমেশ তা বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে সরকার। কিন্তু দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের সক্ষমতা সমান নয়, তাই এ প্রক্রিয়ায় বড় ব্যাংকগুলো বেশি সুবিধা পাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন গোলাম মোয়াজ্জেম। তাই ডলারের দাম একদম বাজারের হাতে ছেড়ে না দিয়ে টাকার আরও কিছুটা অবমূল্যায়ন করে ডলারের দাম বেঁধে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করেন তিনি।
অর্থসূচক/এমএস/এমএস



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.