কৃষিতে ভর্তুকি দেওয়া থেকে সরে আসা উচিত : পরিকল্পনামন্ত্রী

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ধীরে ধীরে কৃষিতে ভর্তুকি দেওয়া থেকে সরে আসা উচিত। কারণ গ্রামের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। গ্রামে বাড়ি ঘরের রূপ পরিবর্তন হয়েছে, খাওয়া-পড়ার বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয়েছে, ছেলে-মেয়েরা শিক্ষিত হচ্ছে। তাই এখন ধীরে ধীরে এই ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।

শনিবার (৪ জুন) কারওয়ান বাজার সিএ ভবনে ‘সম্প্রতিক সময়ে সামষ্টিক অর্থনীতি: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। ইনিস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) ও ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমি কৃষকের সন্তান। কৃষকরাই আমার আত্মীয়, ভোটার সবকিছু। আমি মনে করি ধীরে ধীরে কৃষিতে ভর্তুকি দেওয়া থেকে সরে আসা উচিত। কারণ গ্রামের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। গ্রামে বাড়ি ঘরের রূপ পরিবর্তন হয়েছে, খাওয়া-পড়ার বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয়েছে, ছেলে-মেয়েরা শিক্ষিত হচ্ছে। সরকারের অবদানের কারণেই এই পরিবর্তন হয়েছে। সারসহ কৃষিতে সরকারের ভর্তুকির ফলেই গ্রামে কৃষকের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তাই এখন ধীরে ধীরে এই ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।

শ্রীলঙ্কা ভীতি রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কৃষিতে ভর্তুকি খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দেওয়া হয়। শ্রীলঙ্কাও অর্গানিক কৃষিতে গিয়েছিল, ফেল করেছে। তাই খাদ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কৃষিকে সব সময় আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এ বিষয়ে সরকার সবসময় সচেতন রয়েছে।

রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢালাওভাবে প্রণোদনা দেওয়ার পক্ষে আমি নই। যারা মাসে ২ থেকে ৩শ ডলার রেমিট্যান্স পাঠায় তাদের প্রণোদনা দেওয়া দরকার। এর আগে, যখন ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার কথা হয়েছিল, তখনও আমি বলেছিলাম, ঢালাওভাবে প্রণোদণা দেওয়া ঠিক হবে না। ঢালাওভাবে প্রণোদনা দিলে অনেকে টেবিলের নিচ দিয়ে অর্থ পাঠিয়ে ওপর দিয়ে এনে ঘরে বসেই প্রণোদনা নেবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রবাসীদের রেকর্ড আছে। কারা কতোদিনের জন্য কোন দেশে যাচ্ছেন, সেই রেকর্ড ধরেই প্রণোদনা দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এখন শুনছি আড়াই-তিন বা কোন কোন ব্যাংক নাকি নিজেরাও আরো হাফ অ্যাড করে দিচ্ছেন। এ নিয়ে অর্থনীতিবিদরাও অনেকেই কথা বলেছেন। তবে এ নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা হবে। তিনি বলেন, এখন কার্বওয়ালারাও (খোলা বাজারে) পিছু হটতে (ডলারের দাম কমাতে) বাধ্য হয়েছে। আমি মনে করছি এটা কমিয়ে আনা দরকার এবং যথাযথভাবে দেওয়া দরকার।
অপচয়রোধ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমি একনেক মাঠে, আমি কাজ করি। সরকার প্রধানের নির্দেশে আমরা অপচয় রোধ করতে কাজ করছি। মাঝে মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আয়েশিভাব চলে আসছিলো। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটা আমরা রোধ করার চেষ্টা করছি। এখন ১৮শ প্রকল্প আছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে এগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে। অর্থাৎ গুরুত্ব অনুসারে এই প্রকল্পগুলোকে সাজানো হবে। কোনটা আগে প্রয়োজন কোনটা পরে আবার কোনটা এখন প্রয়োজন নেই সেটা বের করা হবে।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আইসিএবির সভাপতি শাহদাৎ হোসেন, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান, পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ, ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভী, সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম, বার্তা সংস্থা এএফপির ব্যুরো চিফ এম শফিকুল আলম প্রমুখ। সভার সঞ্চালনা করেন আইসিএবির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.