ইমরান খানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার প্রস্তুতি শাহবাজ সরকারের

পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন সরকার। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির বরাত দিয়ে শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম জিইও টিভি।

এই তালিকায় পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মাহমুদ খান ও উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ গিলগিট-বাল্টিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী খালিদ খুরশিদও রয়েছেন। মাহমুদ খান ও খালিদ খুরশিদ উভয়েই পিটিআইয়ের জ্যেষ্ঠ নেতা।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার রাজধানী ইসলামাবাদে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ে এ বিষয়ক একটি বৈঠক হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দেশটির যোগাযোগমন্ত্রী মাওলানা আসাদ মাহমুদ, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কাশ্মির বিষয়ক উপদেষ্টা কামার জামান কাইরা, অর্থমন্ত্রী সর্দার আয়াজ সাদিক, আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রী নাজির তারার, স্বরাষ্ট্রসচিব ইউসুফ নাসিম খোকার এবং ইসলামাবাদ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) নাসির আকবর।

পাকিস্তানের বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও আগাম নির্বাচনের দাবিতে গত ২৪ মে খাইবার পাখতুনওয়া ‘আজাদি মার্চ’ শুরু করে পিটিআই। ২৫ মে সেই লংমার্চ রাজধানিতে প্রবেশের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় পিটিআইয়ের কর্মী-সমর্থকদের।

বৈঠকে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র সচিব ইউসুফ নাসিম খোকার বলেন, ২৫ মার্চের লংমার্চে পিটিআইয়ের অনেক সমর্থক রাজধানী দখল ও লুটপাট করার লক্ষ্য সশস্ত্র হয়ে ইসলামাবাদে প্রবেশ করেছিলেন।

তার এই বক্তব্যকে সমর্থন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ বলেন. ‘পিটিআইয়ের লংমার্চ আসলে ফিৎনা-ফাসাদ মার্চ ছিল, আজাদি মার্চ নয়। এ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য ছিল রাজধানীতে নাশকতা ঘটানো।’

‘ইসলামাবাদে ইমরান খানের প্রবেশের আগেই সেখানে প্রায় আড়াই হাজার দুর্বৃত্ত রাজধানীতে অবস্থান নিয়েছিল এবং তাদের পরিকল্পনা ছিল— ডি চক এলাকায় নাশকতা ও নৈরাজ্য করার।’

‘এ বৈঠকে আমার সুপারিশ—সিআরপিসির (কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর) সেকশন ১২৪ ধারার (এ) উপধারার আওতায় ইমরান খান ও তার দলের দুই জেষ্ঠ্য নেতা মাহমুদ খান ও খালিদ খুরশিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হোক।’

বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রিসভার সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে জিইও টিভির প্রতিবেদনে। আরও বলা হয়েছে, সর্বসম্মতি ক্রমে বৈঠক আগামী ৬ জুন পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। ৬ জুন কমিটির সদস্যরা তাদের প্রস্তাবনা লিখিত আকারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করবেন।

সফল ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিতে আসা ইমরান খান ২০১৮ সালে দুর্নীতিমুক্ত, সমৃদ্ধ ও বিশ্বের কাছে শ্রদ্ধা পাওয়ার মতো দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তবে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে অর্ধেকেরও বেশি সময় সেনা শাসনে থাকা পাকিস্তানে তার ক্ষমতা আরোহণের নেপথ্যে সেনাবাহিনীর আশীর্বাদ ছিল বলে মনে করা হয়।

দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মূলত সেনাবাহিনীর পরোক্ষ মদতেই পাকিস্তানের বড় দুই দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজকে (পিএমএল-এন) হটিয়ে ক্ষমতায় বসার সুযোগ পান তিনি।

কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয় ইমরান খানের। দেশটির শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের নতুন প্রধান নাভিদ আনজুমকে আনুষ্ঠানিক নিয়োগদানকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় এই দ্বন্দ্ব। এর মধ্যে বিরোধীদলগুলো জোট বেঁধে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে।

পরে যদিও নতি স্বীকার করে নাভিদ আনজুমের নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন ইমরান খান, কিন্তু ততদিনে পরিস্থিতি অনেকদূর গড়িয়ে গেছে। পার্লামেন্টে নিজেদের প্রস্তাবে অনড় বিরোধীরাও চলে গেছে আগের চেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে। আদালত ও পার্লামেন্টে বিস্তর নাটকীয়তার পর ১০ এপ্রিল বিরোধীদের অনাস্থাভোটে পরাজিত হয়ে ক্ষমতা হারান ইমরান খান, নতুন প্রধানমন্ত্রী হন শেহবাজ শরিফ।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.