রোজার ঈদকে সামনে রেখে এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও ঠিক পরের মাসেই তা আবার কমে গেছে। সদ্য সমাপ্ত মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা আগের মাস এপ্রিলের চেয়ে ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ কম। আর গত বছরের মে মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ কম।
বুধবার (১ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, মে মাসে দেশে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী (প্রতি ডলার ৮৯ টাকা ধরে) এই অর্থের পরিমাণ ১৬ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। এ অঙ্ক আগের মাসের চেয়ে প্রায় ১২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার বা ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ কম। গত ৩ মে দেশে রোজার ঈদ উদযাপিত হয়েছে। ঈদ সামনে রেখে এপ্রিলে ২০১ কোটি (২.০১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, একক মাসের হিসাবে যা ছিল ১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর আগের বছরের মে মাসের তুলনায় এবার ২৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার বা ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ কম এসেছে। গত বছর মে মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিল ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।
প্রতি বছরই দুই ঈদকে সামনে রেখে পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি অর্থ দেশে পাঠান প্রবাসীরা। কিন্তু দুই ঈদের পরের এক-দুই মাস রেমিট্যান্স বেশ কম আসে। সেই হিসাবে মে মাসে রেমিট্যান্স কিছুটা কম এসেছে। তবে আগামী ৯ অথবা ১০ জুলাই দেশে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। সেই উৎসবকে কেন্দ্র করে আগামী মাসে দেশে বেশি রেমিট্যান্স আসবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম অর্থসূচককে বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে আমরা বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছি। ডলারের দামও অনেক বেশি। ফলে সামনে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরো বাড়বে বলেই মনে করছি। তিনি বলেন, ঈদের আগে সব সময়ই বেশি রেমিট্যান্স আসে। কারণ প্রবাসীরা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে বেশি অর্থ পাঠায়। ঈদের পরের মাসে সেটা আবার কিছুটা কমে যায়। তবে এবার সেটা খুব বেশি কমে নি। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে আগামী মাসে রেমিট্যান্স আবার বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে সরকারের নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবাসী আয় দেশে আনার পথ আরো সহজ করেছে। গত ২৩ মে এই সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এখন পাঁচ হাজার ডলারের ওপরে বা ৫ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্স এলেও কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই প্রণোদনা পাচ্ছেন প্রবাসীরা। আগে পাঁচ হাজার ডলারের বেশি রেমিট্যান্সের বৈধ কাগজপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। তবে অবাধে অর্থ পাঠানোর সুযোগ দেওয়ার পরও বাড়েনি রেমিট্যান্স প্রবাহ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ২৮ কোটি ৩৪ লাখ মার্কিন ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৬ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার। দুটি বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে একটিতে এসেছে ২ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার।
এদিকে দেশের মার্কিন ডলারের দামে অস্থিরতা কাটাতে এক রেট বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস, বাংলাদেশের (এবিবি) দাবির পরিপেক্ষিতে রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার বিনিময় মূল্য ৮৯ টাকা বেঁধে দেয়। আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির জন্য বিসি সেলিং রেট নির্ধারণ করা হয় ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা। যদিও ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৯ টাকা ৮০ পয়সার প্রস্তাব করেছিল।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের রেট বেঁধে দিলেও ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের কাছে এখনো বেশি অর্থাৎ ৯২ থেকে ৯৩ টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে ৯৫-৯৬ টাকায়।
এই অবস্থায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমবে বলে আশংকা করছেন ব্যাংকাররা। তাদের মতে, ব্যাংক এবং খোলা বাজারের পার্থক্য বেশি হওয়ায় হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা বাড়বে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, এ অবস্থা হওয়ার সুযোগ নেই। কেননা হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসলে সমপরিমাণ পাচারেরও সুযোগ থাকতে হবে। যা কোনভাবেই সম্ভব নয়।
অর্থসূচক/মৃত্তিকা সাহা/এমএস



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.