৩৪ রানে ৪ উইকেট, হারের শঙ্কায় বাংলাদেশ

ঢাকা টেস্টের চতুর্থ দিন শ্রীলঙ্কার ইনিংস ৫০৬ রানে গুটিয়ে দিয়ে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিল বাংলাদেশ। চতুর্থ দিনের শুরুতে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও দীনেশ চান্দিমালের ব্যাটিং দেখে মনেই হচ্ছিল এই টেস্ট নিশ্চিত ড্রয়ের দিকেই যাচ্ছে। কিন্তু শেষ বিকেলে দারুণ বোলিং করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছেন লঙ্কান বোলাররা। চতুর্থ দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৪ রান।

মুশফিকুর রহিম ১৪ ও লিটন দাস ১ রান করে অপরাজিত আছেন। ১০৭ রানে পিছিয়ে থেকে খেলতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি। দলীয় ১৫ রানেই ওপেনার তামিম ইকবালের উইকেট হারিয়েছে টাইগাররা। কোনো রান না করা তামিম আসিথা ফার্নান্দোর বেরিয়ে যাওয়া বল তাড়া করতে গিয়ে স্লিপে সাবস্টিটিউট ফিল্ডার কামিন্দু মেন্ডিসের হাতে ক্যাচ দিয়েছে। খানিক বাদে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তার ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ২ রান।

এরপর মুমিনুলকেও থিতু হতে দেননি কাসুন রাজিথা। লঙ্কান এই পেসারের বল তাড়া করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। প্রথম ইনিংসে ৯ রান করা মুমিনুল দ্বিতীয় ইনিংসে কোনো রানই যোগ করতে পারেননি। একপ্রান্ত আগলে রাখা জয় ১৫ রানের বেশি করতে পারেননি। তিনি ফার্নান্দোর বলে সেকেন্ড স্লিপে কুশল মেন্ডিসের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। এরপর দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দিন পার করেছেন মুশফিক ও লিটন।

এর আগে ৫ উইকেটে ২৮২ রান নিয়ে দিন শুরু করা শ্রীলঙ্কা প্রথম দুই সেশনেই কোনো উইকেট হারায়নি। চতুর্থ সকাল থেকেই গুমোট ভাব ছিল আকাশে। মেঘের ফাঁক দিয়ে অল্প অল্প উঁকি দিচ্ছে সূর্য। এক চিলতে রোদের মাঝেই দুই স্লিপ ও গালিতে এক ফিল্ডার নিয়ে দিনের শুরুতে নিজেদের আক্রমণ সাজিয়েছিল বাংলাদেশ। যদিও উইকেটের দেখা পাননি বাংলাদেশের বোলাররা।

উল্টো প্রথম ওভার থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন লঙ্কান দুই ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও দীনেশ চান্দিমাল। এরপর বেশ কয়েকবার বাংলাদেশের বোলাররা এলবিডব্লিউরের আবেদন করলেও আম্পায়ার সাড়া দেননি। তবে সবচেয়ে বড় সুযোগটি ছিল দিনের দশম ওভারে শেষ বলে। এবাদত হোসেনের করা হালকা লাফিয়ে ওঠা বলে স্কয়ার ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন ম্যাথুস। যদিও তা ব্যাটের কানায় লেগে ফার্স্ট ও সেকেন্ড স্লিপের ফাঁক গলে চলে যায় মাঠের বাইরে। পানি পানের বিরতির পর উইকেটের খোঁজে হাতে বল তুলে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। চতুর্থ বলেই পেতে পারতেন সাফল্য। তার করা অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে খেলতে গিয়েছিলেন চান্দিমাল। বল সোজা জমা পড়েছিল উইকেটরক্ষক লিটন দাসের হাতে। আম্পায়ার জোড়ালো আবেদনে সাড়া দিয়ে আউট দেন।

এরপর চান্দিমাল রিভিউ নিলে দেখা যায় বল ব্যাটে লাগেনি। ফলে সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হন আম্পায়ার। এরপরের ওভারেই তাইজুলের বলে স্টাম্পিংয়ের জোরালো আবেদন করে বাংলাদেশ। তবে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় চান্দিমালের পা উইকেটের ভেতরেই ছিল কিছুটা। দিনের শুরু থেকেই দারুণ খেলতে থাকা চান্দিমাল ১১৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। সেঞ্চুরির অপেক্ষা নিয়েই মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। চান্দিমাল ও ম্যাথুস দুজনেই দিনের শুরু থেকে দারুণ খেলে লঙ্কানদের লিড এনে দিয়েছেন। লঙ্কানরা ৪ রানের লিড নিয়ে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে যায়। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারেই উইকেটের দেখা পেতে পারতো বাংলাদেশ।

খালেদ আহমেদের বলে কট বিহাইন্ড আউটের জোরালো আবেদনে সাড়া দিয়ে আঙুল তুলে দিয়েছিলেন আম্পায়ার। কিন্তু ম্যাথিউস রিভিউ নিলে দেখা যায় বল ও ব্যাটের মধ্যে ফাঁকা রয়েছে। ফলে আউট থেকে বেঁচে যান ম্যাথুস। এর খানিক বাদেই নিজের সেঞ্চুরি তুলে নেন লঙ্কান এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। মোসাদ্দেক হোসেনের বলে লং অনে ঠেলে দিয়ে এক রান নিয়ে ম্যাজিকাল ফিগারে পৌঁছান ম্যাথুস। সাদা পোশাকের ক্রিকেটের এটি ম্যাথুসের ১৩তম সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির পর মোসাদ্দেকের বলে আরও একবার রিভিউ নিয়ে বেঁচেছেন ম্যাথুস। এলবিডব্লিউয়ের জোরালো আবেদনে সাড়া দিয়ে আম্পায়ার আউট দিয়েছিলেন। যদিও রিপ্লেতে দেখা যায় বল প্যাডে লাগার আগে ব্যাটের ছোঁয়া লেগেছে।

ম্যাথুসের পর সেঞ্চুরি তুলে নেন চান্দিমালও। তিনি ম্যাথুসের চেয়ে কিছুটা আক্রমণাত্মক খেলেই সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। ১৮১ বলে তিনি তিন অঙ্কে পৌঁছেছেন। সেই সঙ্গে ম্যাথুসের সঙ্গে তার জুটির রান দেড়শো পেরিয়েছে। লঙ্কানরা ৫ উইকেটে ৪৫৯ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায়। ম্যাথুস ১২৩ ও চান্দিমাল ১২০ রান নিয়ে অপরাজিত আছেন।

চা বিরতির পর চান্দিমালের ইনিংস আর বড় হতে দেননি এবাদত হোসেন। তার করা স্লোয়ার বলে এক্সট্রা কাভার দিয়ে ড্রিল ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন চান্দিমাল। কিন্তু ব্যাটে-বলে ঠিক মতো না হওয়ায় শর্ট মিড অফে ক্যাচ তামিম সহজেই ডাইভ দিয়ে দুই হাতে ক্যাচ লুফে নিয়েছেন। এরপর নতুন ব্যাটার নিরোশান ডিকওয়েলাকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে আউট করেছেন সাকিব আল হাসান।

রামেশ মান্ডিসকেও উইকেটে থিতু হতে দেননি টাইগার পেসার এবাদত। তিনি লঙ্কান এই ব্যাটারকে এলবিডব্লিউ করে আউট করেছেন। রিভিউ নিয়েও শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি মেন্ডিসের। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে বল বলের ইম্পেক্ট হয়েছে মিডল স্টাম্পে। পরের ব্যাটার প্রভিন জয়াবিক্রমাকে রানের খাতাই খুলতে দেননি সাকিব। তাকে এলবিডব্লিউ করে আউট করেছেন এই বাঁহাতি টাইগার স্পিনার। আর তাতেই টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৯তম ৫ উইকেটের দেখা পেয়েছেন তিনি। লঙ্কানদের শেষ ব্যাটার আসিথা ফার্নান্দো ২ রান করে রান আউট হলে শ্রীলঙ্কার ইনিংস গুটিয়ে যায় ৫০৬ রানে।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.