এবার আলোচনায় ইলন মাস্কের ‘বোরিং কোম্পানি’

৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে টুইটার কিনে এখন আলোচনায় বিশ্বের শীর্ষ ধনী, গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা ও মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্স এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক।

এর বাইরেও তাঁর রয়েছে অনেক উদ্যোগ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগও করেছেন প্রচুর। তবে এখন ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে বেশ আলোচনা দেখা দিয়েছে ইলন মাস্কের ‘দ্য বোরিং’ কোম্পানি কে নিয়ে। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানটির সম্ভাবনাময় কার্যক্রমের জন্য একে আরেক ইউনিকর্ন বলে মনে করা হচ্ছে।

খবর সিএনএনের

বর্তমান সময়ে বড় বড় শহরগুলোতে বড় যন্ত্রণার নাম যানজট। ভিড় এড়াতে বিকল্প পথ তৈরির কাজ করে থাকে এ বোরিং কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির মূল কাজ হচ্ছে টানেল বা সুড়ঙ্গপথ তৈরি করা। ইলন মাস্কের বোরিং কোম্পানি এ ধরনের প্রকল্পের নাম দিয়েছে ‘লুপ’ প্রকল্প। অর্থাৎ, যানজট এড়াতে পাতালপথ বা বিশেষ লুপ তৈরি করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি ইলন মাস্কের এ প্রতিষ্ঠান ৬৭ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে। এর ফলে বিনিয়োগের অর্থে আরও বেশি লুপ প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে চাইছে বোরিং কোম্পানি।

সিএনএন বলছে, লুপ হচ্ছে অধিকাংশ ভূগর্ভস্থ পরিবহন ব্যবস্থা, যাতে টেসলার গাড়িতে চড়ে নির্দিষ্ট দূরত্বের স্টেশনে ভ্রমণ করা যায়। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে একটি লুপ চালু হয়েছে। সেখানে তিনটি স্টেশন রয়েছে। লাস ভেগাস কনভেনশন সেন্টারের মধ্যে দিয়ে ১ দশমিক ৭ মাইল ভূগর্ভস্থ পথও রয়েছে। এ পথকে আরও বাড়াতে চাইছে বোরিং। ২৯ মাইলজুড়ে ৫১ স্টেশনবিশিষ্ট লুপ তৈরির পরিকল্পনা করেছে বোরিং কোম্পানি। এ ছাড়াও ফ্লোরিডার ফোর্ট লডেরডালে এ ধরনের একটি প্রকল্প তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর বাইরে টেক্সাসেও এ ধরনের প্রকল্প নিয়ে কথাবার্তা চলছে। এর আগে প্রতিষ্ঠানটি শিকাগো, ওয়াশিংটন ডিসি, লস অ্যাঞ্জেলেসেও প্রকল্প চালুর ঘোষণা দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি, তবে প্রকল্প সম্পূর্ণ হয়নি। বরং লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো ও বাল্টিমোরের মতো স্থানে বড় ধরনের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। তবে সম্প্রতি লডারডালের মেয়র ডিন ট্রানটালিস বলেন, ‘আমরা আগ্রহী। এ প্রকল্প সামনে এগিয়ে নিতে চাই। বোরিং কোম্পানির সঙ্গে সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। একটি স্থানীয় সমুদ্রসৈকত ও কাছের শহরকে সংযুক্ত করবে এ পাতালসড়ক।’

সমালোচকেরা অবশ্য বোরিং কোম্পানির প্রকল্পগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের যুক্তি, বোরিং মূলত পাতাল রেলব্যবস্থা চালু করছে। কিন্তু ট্রেনের পরিবর্তে সেখানে গাড়ি ব্যবহার করছে। এ ধরনের পথ তৈরিতে প্রতি মাইলে ১০০ কোটি ডলার খরচ হবে। তবে বোরিং বলছে, তারা আরও সাশ্রয়ী টানেল তৈরির প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। তারা যে পদ্ধতি নিয়ে কাজ করবে, তা প্রচলিত সাবওয়ে পদ্ধতির চেয়ে উন্নত। কারণ, এতে কেবল নির্দিষ্ট গন্তব্যেই গাড়ি থামবে।

বোরিং কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক এর আগে বলেছিলেন, বিভিন্ন শহরে স্বচালিত গাড়ির মাধ্যমে মানুষ ঘুরে বেড়াবে। গাড়ির গতি ঘণ্টায় ১২০ মাইল পর্যন্ত তোলা যাবে। তবে তাঁর লক্ষ্যের সঙ্গে বাস্তবতার পার্থক্য রয়েছে। বর্তমানে লাস ভেগাসে এখনো চালকের হাতেই রয়েছে গাড়ির স্টিয়ারিং। তবে বোরিং বলছে, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে চালকবিহীন স্বয়ংক্রিয় গাড়ির মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা। এতে পরিচালন ব্যয় কমবে। এ ছাড়া পরবর্তী কয়েক বছরে বোরিংয়ের সিস্টেম আরও দ্রুত পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং সম্পূর্ণ স্বচালিত করে কার্যক্ষমতা ১০ গুণ বাড়ানো হবে।

এ ছাড়া বোরিং তাদের পরবর্তী প্রজন্মের টানেল খননযন্ত্রের নকশা হালনাগাদ করছে। এতে দূরে বসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে খননযন্ত্র চালানো যাবে। এর ফলে কাউকে সুড়ঙ্গের ভেতরে ঢোকা লাগবে না। বর্তমানে বোরিংয়ের তৈরি প্রুফ্রক নামের খননযন্ত্র প্রতি সপ্তাহে এক মাইল পর্যন্ত খনন করতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলেন, খননকাজে খরচ সাশ্রয় করতে হলে দ্রুত খনন করা গুরুত্বপূর্ণ।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.