রুটি কিনতে গিয়ে লাশ হলেন বাবা, থামছেই না মেয়ের কান্না

ইউক্রেনে এক বাবা পরিবারের সদস্যদের জন্য রুটি কিনতে বেরিয়েছিলেন বাসা থেকে। কিন্তু ফিরলেন লাশ হয়ে। বাড়ির সামনেই একটি গুলি এসে তার দেহে লাগলে তাতে মৃত্যু হয় ওই বাবার। এদিকে বাবার এমন মর্মান্তিক মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না মেয়ে। বাবার মরদেহের পাশে আহাজারি করছেন তিনি। মেয়ের আহাজারির সেই ছবি দেখে যেন কাঁদছে পুরো বিশ্ব।

মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে রুশ সীমান্তবর্তী পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ শহরে। গত সোমবার (১৮ এপ্রিল) শহরে নিজের অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে গোলার আঘাতে ওই ব্যক্তি নিহত হন। শুক্রবার (২২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবারের সদস্যদের জন্য রুটি কিনতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে গোলার আঘাতে প্রাণ হারানো ওই বাবার নাম ভিক্টর গুবারেভ। পরে মেয়ে ইয়ানা বাচেক বাবাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন। সাহায্যের জন্য উদ্ধার কর্মীদের ডেকেও কোনো লাভ হয়নি।

ভিক্টর গুবারেভের ফ্ল্যাটের পাশেই আরেকটি ফ্ল্যাটে বসবাস করেন মেয়ে ইয়ানা বাচেক। পেশায় ইংরেজির শিক্ষিকা ইয়ানা জানান, সোমবার তিনি নিজের বাসায় অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেলেন। এরই একপর্যায়ে গোলাবর্ষণ শুরু হয়।

ইয়ানা বলেন, ‘বিস্ফোরণের কথা আমার এখনও মনে আছে। আমি তখন মাত্র কেনাকাটা করে বাসায় ফিরে এসেছি এবং সঙ্গে সঙ্গেই ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ, প্রচন্ড শব্দ।’

ঠিক তখনই ইয়ানার মা লিউবভ আতঙ্কিত গলায় জানান, তার বাবা রুটি কিনতে বাইরে গিয়েছিলেন এবং এখনও ফিরে আসেননি। কিন্তু ইয়ানা বাচেককে তখনই বাইরে বের হতে নিষেধ করেন সঙ্গী ইয়েভগেনি। কারণ তখনও বাইরে গোলাবর্ষণ চলছিল।

ইয়ানা বলেন, আমি ঘর থেকেই বাবাকে ডাকতে শুরু করলাম কিন্তু কোনো উত্তর নেই। তবে এর কয়েক মিনিট পরই অনেকটা জোর করেই বাইরে যান মেয়ে ইয়ানা। কিন্তু অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে বাবার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে সে সময় সেখানে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছায়।

রয়টার্স জানান, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কাছে বুচা শহরে খুঁজে পাওয়া গণকবর বা বন্দরনগরী মারিউপোলে চালানো রুশ ধ্বংসযজ্ঞ বা খারকিভের মতো শহরগুলোতে নির্বিচারে গোলাবর্ষণকেই মূলত ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে অভিহিত করে আসছে ক্রেমলিন।

রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনকে ‘নাৎসীবাদ মুক্ত’ করাই তাদের এই সামরিক অভিযানের লক্ষ্য। তবে কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্ররা এটিকে যুদ্ধের মিথ্যা অজুহাত হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খারকিভ শহরে গত সোমবার অন্তত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ভিক্টর গুবারেভ একজন। পূর্ব ইউক্রেনের এই শহরটি গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ আগ্রাসনের শুরু থেকে প্রায় প্রতিদিনই বোমা হামলার শিকার হয়েছে। রাশিয়া অবশ্য ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে।

উল্লেখ্য, রুশ সীমান্তবর্তী পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ শহরটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং রুশ সীমান্ত থেকে মাত্র ৪২ কিলোমিটার (২৬ মাইল) দূরে অবস্থিত। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে ৪০০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি মূলত একটি শিল্পাঞ্চল ও বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র। এখানে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বসবাস করেন। অবশ্য বাসিন্দাদের মধ্যে অনেক রুশভাষীও আছেন।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.