পুঁজিবাজারে চালু হবে রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট

ডিএসইর উদ্যোগে কর্মশালা অনুষ্ঠিত

দেশের পুঁজিবাজারে রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট (আরইআইটি) চালুর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই ট্রাস্ট চালুর বিষয়ে সবরকম সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।

আজ বুধবার (১৩ এপ্রিল) দেশের পুঁজিবাজারে রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট (আরইআইটি) প্রবর্তন বিষয়ক একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মশালায় বলা হয়, একটি কার্যকর রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট চালুর মাধ্যমে সবাই লাভবান হবেন। এর মাধ্যমে পরিকল্পিত টাউনশিপ সম্ভব হবে।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএসইসি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম, ডিএসই’র চেয়ারম্যার মোঃ ইউনুসুর রহমান, বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম, কামরুল আনাম খান, এম. হাসান মাহমুদ, ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও, সিডিবিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভ্র কান্তি চৌধুরী, এফসিএ সিসিবিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরহাদ আহমেদ, সিটি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এরশাদ হোসেনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

সিটি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এরশাদ হোসেন রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট (আরইআইটি) বিষয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর আইন-কানুন তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের এটি চালুর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইন-কানুন বিষয়ে আলোকপাত করেন।

ওয়ার্কশপে রিয়েলস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট এর বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেন ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূইয়া। তিনি আরইআইটি উদ্দেশ্য, প্রধান বিনিয়োগকারী, বিনিয়োগকারী ও কোম্পানির বিনিয়োগের সুবিধা, আরইআইটি এর প্রকারভেদ ও স্ট্রাকচার, আরইএটি এর প্রয়োজনীয় পক্ষমূহ, আরইএটি তে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের বিবেচনা, বিদেশী এনআরবি এর বিনিয়োগকে উত্সাহিত করা, বাংলাদেশে আরইএটি প্রবর্তনের চ্যালেঞ্জসমূহ ও বৈশ্বিক অনুশীলন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রূবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজার একটি দেশের অর্থনীতির দর্পন হিসেবে কাজ করে। একটি দেশের পুঁজিবাজার যত শক্তিশালী সে দেশের অর্থনীতি তত বেশি শক্তিশালী। আমরা ছোটবেলার রচণা পড়েছি অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষিখাতকে অগ্রাধিকার প্রদান করে ভর্তুকিসহ আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্যের স্বংয়সম্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বাসস্থানের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আজকে যে “Real Estate Investment Trusts” এর বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে এটা দিয়ে টাউন প্লানিং সম্ভব। আর এটাকে জনপ্রিয় করার জন্য আমরা এনবিআর এর সাথে আলোচনা করতে পারি।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের অধিক জনসংখ্যা থাকায় এবং জনগনের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন হবার কারণে রিয়েল এস্টেট খাতে চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। রিয়েল এস্টেট ট্রাস্ট এর বিষয়ে আইন কানুন যখন তৈরী হয়ে যাবে তখন তাদের এসোসিয়েশন ও তাদের অর্থায়ন প্রদানকারী কোম্পানির সাথে আলোচনা করে রুলটা চূড়ান্ত করা হবে। আর এর মাধ্যমে প্রোডাক্ট দ্রুত বাজারে আসবে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথী বিএসইসি’র কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, রিয়েল এসে্টট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট বিষয়ে আমরা নতুন যে প্রোডাক্ট তৈরী করার চেষ্টা করছি তার একটি দীর্ঘমেয়াদী ভিশন রয়েছে। সেখানে যাতে আস্থা অনেক বেশী থাকে সে বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। এ প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে সম্পদের ভ্যালুয়েশন নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে। কারণ এ ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা রয়েছে। আর বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর জন্য আমাদের বিভিন্ন টেকনিক্যাল বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। আর পুঁজিবাজারের প্রোডাক্টগুলোকে ডিজিটাল ওয়েতে পরিচিত করতে হবে। ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অনুরোধ করবো এবিষয়ে আইনকানুন তৈরীর জন্য দ্রুততার সাথে একটি কমিটি তৈরী করতে। যেন তারা খুব অল্প সময়ের মধ্যে আইন-কানুন তৈরী করে নতুন প্রোডাক্টটি বাজারে নিয়ে আসা যায়।

ডিএসই’র চেয়ারম্যান ইউনুসর রহমান বলেন, আমি অত্যান্ত আশ্বস্ত হলাম যে এই বিষয়ে রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক করার জন্য কোন ফান্ডামেন্টাল আইনের পরিবর্তন বা নতুন আইন করতে হবে না। আইন পরিবর্তন করা খুবই সময় সাপেক্ষ। বিএসইসি এজন্য প্রয়োজনীয় আইনকানুন করতে পারবে। ডিএসই’র পক্ষ থেকে যত তারাতারি সম্ভব প্রাথমিক ড্রাফট তৈরী করে অন্যান্য বিশেষজ্ঞ এবং পরামর্শকদের সাথে আলোচনার করা যায় এবং খুব কম সময়ে তার ফলাফল নিয়ে আসা যায়। সে বিষয়ে অগ্রসর হতে হবে।প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশের রিয়েল এসে্টট এ বিনিয়োগে আগ্রহী। তাই এর ভাল ভবিস্যত্ রয়েছে। বাংলাদেশের সামাজিক খাতের অগ্রগতি বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু আর্থিকখাতে সে অনুযায়ী অনেক পিছিয়ে আছি। আমাদের এক্ষেত্রে দ্রুত উন্নয়ন করতে হবে। আমরা এটি পারবো বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

উল্লেখ, রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট আরইআইটি হল এমন তহবিল বা একটি ট্রাস্ট যা আয়-উৎপাদনকারী বাণিজ্যিক রিয়েল এস্টেট (যেমন শপিং কমপ্লেক্স, হাসপাতাল, আবাদী জমি, শিল্পজাত সম্পত্তি, হোটেল এবং অফিস ব্লক) এর মালিক ও পরিচালনা করে। আরইআইটি হল মিউচুয়াল ফান্ডের মতো কারণ তারা উভয়েই বিনিয়োগকারীদের তাদের পুঁজি এবং সম্পদগুলি একজন মনোনীত ভারপ্রাপ্ত-ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়। মিউচুয়াল ফান্ডের অন্তর্নিহিত সম্পদ সাধারণত ইক্যুইটি, ঋণ বা এগুলোর সংমিশ্রণ, আরইআইটি-এর ক্ষেত্রে অন্তর্নিহিত সম্পদ হল প্রাথমিকভাবে রিয়েল এস্টেট হোল্ডিং। আরইআইটি -এর মূল উদ্দেশ্য হল এই ধরনের সম্পত্তি ইজারা দেওয়ার একমাত্র লক্ষ্যে রিয়েল এস্টেট সম্পত্তি অর্জন করা এবং বিনিয়োগ পোর্টফোলিওর অংশ হিসাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ মুনাফা নিশ্চিত করার জন্য এটি পরিচালনা করা। আরইআইটি তাদের নিজেদের সম্পত্তি ক্রয় বা পরিচালনা করার জন্য দায়িত্ব না চাপিয়ে বিনিয়োগকারীদের রিয়েল এস্টেটের প্রাসঙ্গিক এক্সপোজারের অনুমতি দেয়।

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.