১০ বছর নয়, স্বল্পসময়ে জনশুমারি চান পরিকল্পনামন্ত্রী

‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ পাঁচ বছর বা স্বল্পসময়ে জনশুমারি সম্পন্ন করে থাকে। তাহলে আমরা কেন ১০ বছর অপেক্ষা করবো। স্বল্পসময়ে জনশুমারি সম্পন্ন করার জন্য আমাদেরও সমসাময়িক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।’

বুধবার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর শেরে বাংলানগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২’ বিষয়ে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে অবহিতকরণ কর্মশালায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এসব কথা বলেন।

কয়েক দফা তারিখ পরিবর্তনের পর অবশেষে দেশব্যাপী মাঠ পর্যায়ে একযোগে সাত দিনব্যাপী কাঙ্ক্ষিত জনশুমারির তথ্য সংগ্রহ করা হবে আগামী ১৫ থেকে ২১ জুন। এ লক্ষ্যে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ট্যাবলেট কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের গত বছর শুমারি করার কথা ছিল। কিন্তু আমরা শুমারির কাজ করতে গিয়ে পিছিয়ে গেছি। কয়েকটি কারণে আমরা শুমারির কাজ করতে গিয়ে পিছিয়ে গেছি। কোভিডের কারণে আমরা প্রথম ধাক্কা খেয়েছি। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম ম্যানুয়ালি শুমারি করবো, পরে ডিজিটালি শুমারি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। যেহেতু বাংলাদেশ ডিজিটালি অনেক এগিয়ে গেছে। সব জায়গায় এখন স্মার্টফোন ব্যবহার হচ্ছে, ইন্টারনেট সংযোগও বেড়েছে। ডিজিটালি শুমারির কারণে বেশি নিখুঁত হবে, বিশুদ্ধতা বেশি হবে।

‘শুমারি করতে গিয়ে প্রকিউরমেন্টে আমরা হোঁচট খেয়েছি। বিরাট একটা ক্রয়াদেশ ছিল ট্যাব কেনার। এটা তিনবার ক্রয় কমিটি থেকে ফিরে এসেছে। সর্বোচ্চ পরিমাণে স্বচ্ছতার সঙ্গে ক্রয় কমিটিতে বার বার গেছি, ওনাদের বুঝিয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা সরকার প্রধানকে সবসময় শুমারির বিষয়ে অবহিত করেছি। ১৫ থেকে ২১ জুন জনশুমারি অনুষ্ঠিত হবে। কাজটা সম্পাদান করতে দেশের সব নাগরিকের সহায়তা চাইবো। এ বিষয়ে আমাদের সরকারপ্রধান দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন।

মন্ত্রী বলেন, আমরা পরিসংখ্যান বিভাগকে বার বার বলছি, অবাধ তথ্যপ্রবাহ সৃষ্টি করতে হবে। সাংবাদিকরা যেন সব তথ্য পেতে পারেন। আমরা এমন কোনো ক্লাসিফাইড তথ্য ডিল করছি না যে সবার কাছে শেয়ার করা যাবে না। সাংবাদিকরা সবসময় শুমারি নিয়ে সচেতন থাকবে। অন্যদিকে আমরাও সঠিক উত্তর দিতে প্রস্তুত থাকবো।

‘১০ বছর অন্তর অন্তর শুমারির পক্ষে আমি নই’ দাবি করে মন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয় এভাবে মাথা গোনার আয়জনের দরকার নেই। আমরা এর মধ্যে চিন্তাভাবনা করছি স্বল্পসময়ে শুমারি করার। দেশ এগিয়ে গেছে, জ্ঞান-বিজ্ঞান আরও প্রসারিত হয়েছে, সংস্কৃতি বাড়ছে, স্মার্টফোনের সংখ্যা প্রায় সর্বত্র চলে গেছে। ফলে কেন ১০ বছরের পরিবর্তে স্বল্পসময়ে শুমারি করতে পারবো না? শুমারির অপারেশন রিয়েল টাইমে করবো। কোন দেশ এগুলো করছে। সুতরাং আমরা আশা করছি পরবর্তী গণনা ৫ বছর পরপর করবো। এটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে, আমাদের সক্ষমতা যাচাই করতে হবে। দরকার হয় এক্সপার্টদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কিন্তু আমি চাই ১০ বছর পরে পরে মহাযজ্ঞ না করে গিয়ে টাইম টু টাইম জনশুমারি করতে হবে। আজকে কেন সময়মতো প্রধানমন্ত্রী দেশের জনসংখ্যার সঠিক তথ্য পাবেন না। আমাদের হাতের কাছে টেকনোলজি আছে, এটা ব্যবহার করতে হবে।

মন্ত্রী আরও বলেন, প্রতিটি তথ্য বাংলায় হতে হবে। জনশুমারির জন্য যে ফর্ম হাতে যাবে সেটা বাংলায় হবে। যে তথ্য সংগ্রহ করা হবে সেটাও বাংলায় হবে। এটা নিয়ে যে প্রকাশনা বের হবে সেটাও বাংলায় হতে হবে। কোনো আবেগ নয়, ইংরেজির প্রয়োজন আছে, কারণ আমাদের বিদেশি বন্ধু আছে। তাদের জন্য কিছু প্রকাশনা ইংরেজিতে হবে। তবে মেজর কাজগুলো বাংলায় করা হবে। সবার এক্সসেস যেন স্বস্তিদায়ক হয়। ছাপার কাজও আমরা নিজেরাই করবো। প্রচারের জন্য সংবাদমাধ্যম পাশে থাকবে। জেলা, উপজেলা অফিসার আমাদের সহায়তা করবে। উপজেলা পর্যায়ে যেসব ডিজিটাল বোর্ড আছে সেগুলোতে প্রচার করতে হবে।

এসময় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ১৫ থেকে ২১ জুন জনশুমারি অনুষ্ঠিত হবে ডিজিটালি। দেশ ডিজিটাল হয়েছে এটাই প্রমাণ। জনশুমারি ১০ বছর পরপর অনুষ্ঠিত হবে। ডিজিটালি শুমারির পরে আমরা ৫ বছর পরপর জনশুমারি করার পরিকল্পনা হাতে নেবো। আমার বিশ্বাস আমরা সফল হতে পারবো।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.