১৮ মাসে ২২ মসজিদ বন্ধ করেছে ফ্রান্স

গত ১৮ মাসে ২২টি মসজিদ বন্ধ করা হয়েছে ফ্রান্সে৷ এই সংখ্যা তার আগের তিন বছরে মোট মসজিদ বন্ধের তুলনায় অনেক বেশি বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা৷

মসজিদ বন্ধ করার প্রমাণ হিসেবে ফ্রান্স সরকারের পক্ষে থেকে ২০ পাতার একটি নথি (যেটি ‘হোয়াইট মেমো’ নামে পরিচিত) আদালতে উপস্থাপন করা হয়৷ সেটি রয়টার্স বিশ্লেষণ করে বলছে, নথিটি কবে তৈরি হয়েছে, কে করেছে এবং তথ্য কোথা থেকে পাওয়া গেছে তার কোনো উল্লেখ নেই৷

ফ্রান্সে প্রায় আড়াই হাজার মসজিদ রয়েছে৷ এর মধ্যে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ মতাদর্শ প্রচার সন্দেহে ৯০টি মসজিদে তদন্ত চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷

ফ্রান্সের উত্তরপশ্চিমের আলন শহরের আলন মসজিদটি গত অক্টোবরে বন্ধ করে দেয়া হয়৷ ‘ইসলামের মৌলবাদী রূপ’ প্রচার ও ‘ফ্রান্সের প্রতি ঘৃণার অনুভব চাষ’ করার অভিযোগ এনে মসজিদটি বন্ধ করা হয়৷ কিন্তু মসজিদের কর্মকর্তারা বলেন, সরকার তার অভিযোগের সমর্থনে খুব কম প্রমাণ উপস্থাপন করেছে৷

হোয়াইট মেমোতে আলন মসজিদের চারজনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর ও ২০২১ সালের এপ্রিলে সংঘটিত দুটি সন্ত্রাসী হামলায় সমর্থন প্রকাশের অভিযোগ আনা হয়৷ এদের একজন করিম দাউদ। তিনি স্থানীয় সরকারি অফিসে কাজ করেন৷ ২০২১ সালের অক্টোবরে তাকে সরকারি কর্মচারী হিসেব তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পদক দেয়া হয়েছিল৷ ২০২০ সালে সন্ত্রাসী হামলার পর তিনি গির্জায় গিয়ে সংহতিও প্রকাশ করেছিলেন৷

হোয়াইট মেমোতে মসজিদ থেকে পাঁচটি বই উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে৷ এগুলোকে ‘মৌলবাদী’ বই বলে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ অথচ এর মধ্যে চারটি বই বিশেষায়িত বইয়ের দোকান এবং অনলাইনে অনেক পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন লিল ইন্সটিটিউট অফ পলিটিক্যাল স্টাডিজের ইসলামিক স্টাডিজের শিক্ষক দাউদ রিফি৷ অন্য বইয়ের নাম ‘রিয়াদ আস-সালিহিন’৷ ১৩ শতকের এই বইটি ফ্রান্সের জাতীয় গ্রন্থাগারে রাখা আছে৷

হোয়াইট মেমোতে আরও অভিযোগ করা হয়, আলন মসজিদের ধর্মপ্রচারকরা জিহাদের প্রশংসা করেছেন ও মুসল্লিরা সহিংসতার ডাক দিচ্ছেন বলে শোনা গেছে (যদিও কারা শুনেছেন তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি)৷ এ ব্যাপারে করিম দাউদ বলছেন, সরকার ‘জিহাদ’ শব্দটির ভুল ব্যাখ্যা করেছে৷ জিহাদের অর্থ সশস্ত্র সংঘাত হতে পারে৷ আবার ‘জিহাদ আল-আকবর’ বোঝাতে প্রায়ই এটি ব্যবহার করা হয়, যার অর্থ, নফস বা নিজ আত্মা পরিশুদ্ধ করার সংগ্রাম৷

অধিকার কর্মী, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যদের অভিযোগ, ফ্রান্সে ধর্মীয় স্থান বন্ধের জন্য কর্তৃপক্ষকে এত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যে, যথাযথ পরীক্ষা না করেই মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে৷ এছাড়া অস্পষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করায় ও পর্যাপ্ত প্রমাণ না দেয়ায় মামলা পরিচালনা করা অনেকক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না৷

যে আইনে মসজিদ বন্ধ করা হয় তাতে কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ ছয় মাসের জন্য মসজিদ বন্ধ করতে পারে৷ তবে অধিকার কর্মী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেবে দেখা গেছে, অনেক মসজিদই আর কখনও খোলা হয় না৷ বন্ধ হওয়া ২২টি মসজিদের মধ্যে কতটি আবার খুলেছে সে হিসাব মন্ত্রণালয় জানায়নি৷

এলিসি প্রাসাদ রয়টার্সের এই বিশেষ প্রতিবেদন নিয়ে মন্তব্য করতে চায়নি৷ তবে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসলামি সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে সরকার কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা বাড়িয়েছে এবং ‘আইনের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে’ তা করা হয়েছে৷

ইউরোপে সবচেয়ে বেশি মুসলমান বাস করেন এমন দেশগুলোর মধ্যে একটি ফ্রান্স৷ কিন্তু সেখানকার মুসলমানরা বলছেন, দেশটি ক্রমে মুসলমানদের জন্য বৈরী হয়ে উঠছে৷ দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেব বলছে, ২০২১ সালে মুসলিমবিরোধী বৈষম্যমূলক আচরণ বেড়েছে৷ আর অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা কমেছে৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.