রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি বৈঠকে বিষ!

চেলসি ফুটবল টিমের মালিক ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কোটিপতি রোমান অ্যাব্রামোভিচ ইউক্রেনে শান্তি বৈঠক করতে গিয়েছিলেন। গত ৩ মার্চ রাশিয়ার প্রতিনিধি দলে তিনি ছিলেন।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্টে বলা হয়েছে, তারপর থেকেই তিনি অসুস্থ। চোখে যন্ত্রণা, চামড়ায় অস্বস্তি নিয়ে তিনি ফিরেছিলেন। পরীক্ষা করে দেখা গেছে তার শরীরে বিষের উপস্থিতি আছে। তবে ঠিক কী বিষ কীভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল, তা স্পষ্ট নয়। খুব কম মাত্রায় বিষ দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে। যার ফলে কারও মৃত্যু হয়নি।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের দাবি, তদন্তমূলক সংবাদসংস্থা বেলিংক্যাট প্রথম এই রিপোর্ট করে। ইউক্রেনের দুই প্রতিনিধি অসুস্থ হয়ে তাদের কাছে পৌঁছায়। কারণ, বেলিংক্যাটের এক ব্যক্তি রাসায়নিক অস্ত্রের বিশেষজ্ঞ। তাদের শরীরে রাসায়নিক অস্ত্রের কোনো প্রভাব পড়েছে কি না, তা বুঝতেই বেলিংক্যাটের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ইউক্রেনের শান্তি বৈঠকে থাকা দুই প্রতিনিধি। তাদের পরীক্ষা করেই বেলিংক্যাট প্রাথমিক যে রিপোর্ট প্রকাশ করে, তাতে বলা হয়, দুই প্রতিনিধির শরীরেই বিষ মিলেছে। কিন্তু বিষের পরিমাণ খুব কম। বৈঠকের একদিন পর থেকে তাদের শরীরে উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে। তবে দুইজনেই ক্রমশ বিষের প্রভাব কাটিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছেন। রাশিয়ার প্রতিনিধিদের শরীরেও ওই একই ধরনের বিষের উপসর্গ দেখা গেছে বলে রিপোর্টে প্রকাশ। তবে ঠিক কী ধরনের রাসায়নিক তাদের শরীরে মিলেছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিষ কীভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল, কারা করেছিল, তা-ও অস্পষ্ট।

চেলসি ফুটবল টিমের এই মালিক পুতিনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। এতটাই যে, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পরে আমেরিকা-সহ পশ্চিমা বিশ্ব যাদের উপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছিল, অ্যাব্রামোভিচ তাদের মধ্যে অন্যতম। ক্রেমলিনের দাবি, তিনি স্বেচ্ছায় শান্তি বৈঠকে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। তবে বৈঠকের মাঝপথে তাকে বদলে দেওয়া হয়। অন্য এক রাশিয়ার প্রতিনিধিকে আলোচনায় অংশ নিতে পাঠানো হয়। কেন অ্যাব্রামোভিচকে পাল্টে দেওয়া হলো, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানায়নি ক্রেমলিন। কীভাবে তার শরীরে বিষ ঢুকল, কারা এ কাজ করল, কিছুই এখনো স্পষ্ট নয়।

বৈঠক যেহেতু ইউক্রেনে হয়েছিল, ফলে গোটা ঘটনায় ইউক্রেনের দায় থেকে যায়। দেশটির প্রেসিডেন্ট দপ্তরের মুখপাত্র মিখাইলো পোদোলিয়াক জানিয়েছেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে শুধু অস্ত্রের লড়াই হচ্ছে না, তথ্যের লড়াইও চলছে। নানা তথ্য বাতাসে উড়ছে। সেগুলিকে বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।

অভিযোগ ওঠার পর একজন মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছিলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে যে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শারীরিক উপসর্গগুলো ‘পরিবেশগত’ কারণে হয়েছে, বিষপ্রয়োগের কারণে নয়।

পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট অফিসের একজন কর্মকর্তা জোভকাভা বিবিসিকে বলেছিলেন, তিনি যদিও আব্রামোভিচের সাথে কথা বলেননি, কিন্তু ইউক্রেনের আলোচক দলের সদস্যরা সবাই সুস্থ আছেন।

তবে অন্য আরেকজন এই অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেছিলেনে।

রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠকে হাজির অন্যতম প্রতিনিধি রুস্তেম উমেরভও জানিয়েছেন, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন কিন্তু এখন অনেকটাই সুস্থ। চারিদিকে প্রচুর গসিপ শোনা যাচ্ছে, তাতে কান না দেওয়াই ভালো।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা গ্রুপ বেলিংক্যাট বলছে, আব্রামোভিচ এবং কয়েকজন আলোচক যে সব উপসর্গে ভুগেছেন, তা ‘রাসায়নিক অস্ত্রের বিষক্রিয়ার মত’। এসব উপসর্গের মধ্যে রয়েছে, ‘চোখ ও ত্বকে জ্বালাপোড়া এবং চোখে তীক্ষ্ম ব্যথা’।

অনেকেই ভাবছেন, কাজটি রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা সার্ভিস জিআরইউ’র কাজ এটি, যাদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে নভিচক সেইনসবরি বিষক্রিয়ায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছিল ব্রিটেন। রাশিয়ার তরফ থেকে এ নিয়ে এখনো কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি, এবং তারা কোনভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে তেমন প্রমাণও নেই। অন্যদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্রের অভিযোগও উঠতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের শরীরে বিষ মেলা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কিন্তু মনে হচ্ছে কেউ হয়ত শান্তি আলোচকদের কাছে একটি সতর্কবার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছে। হয়ত বলার চেষ্টা করেছে, এটা প্রাণঘাতী ছিল না, এটা কেবলই হুঁশিয়ারি। তবে মার্কিন কর্মকর্তার ‘পরিবেশগত’ প্রভাব বলে যে মন্তব্য তাকে অযথার্থ বলে মন্তব্য করেছেন রাসায়নিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ হামিশ ডি ব্রেটন-গর্ডন। সূত্র: ডিডাব্লিউ, বিবিসি, রয়টার্স, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, এপি

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.