স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে অটোমেশনের বিকল্প নেই

কর ও ভ্যাট আদায়ে ব্যবসায়ীদের অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআরে এমন নালিশ করা হলে ব্যবসায়ীদের ফাইল আটকে রেখে আরো বেশি জটিলতা বাড়ানো হয় বলে অভিযোগ করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।

সরকারি- বেসরকারি খাতে এমন দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ন্যাশনাল কমিশন গঠনের দাবিও এ সংগঠনের। সংগঠনটির সভাপতি রিজওয়ান রহমান বলেন, একমাত্র অটোমেশনই ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্যান্য খাতে সব ধরনের দুর্নীতি রোধ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে।

রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘সংবাদ সম্মেলন’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আরমান হক এবং সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

রিজওয়ান রহমান জানান, এ বছর ঢাকা চেম্বার সিএমএসএমই, বেসরকারি বিনিয়োগ ও এফডিআই, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, সমদ্র অর্থনীতি, দক্ষতা উন্নয়ন, ডিজিটাল এনগেইজমেন্ট, কর ব্যবস্থাপনা এবং এলডিসি উত্তোরণ প্রভৃতি বিষয় সমূহের উপর অধিক হারে গুরুত্বারোপ করবে।

সভাপতি বলেন, কোভিড মহামারির কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশেষকরে সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির বিষয়টি আরো সহজীকরণ করা প্রয়োজন। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকার জন্য আমাদের মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সুমদ্র অর্থনীতিকে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় হিসেবে উল্লেখ করে তিনি জানান, আমাদের জিডিপিতে এখাতে অবদান রয়েছে ৩.১ শতাংশ এবং এ সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য একটি কার্যকর রূপকল্প প্রণয়নে দাবি জানান ডিসিসিআই সভাপতি।

রিজওয়ান রাহমান বলেন, এলডিসি উত্তোরণের পর বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বেশ প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে, এমতাবস্থায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পাশাপাশি পিটিএ এবং এফটিএ স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নেগোশিয়েশনের দক্ষতা আরো বাড়ানো অতীব জরুরি, সেই সাথে এফটিএ’র উপর আমাদের অধিক হারে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে বিশেষ করে বিদ্যমান করকাঠামোর প্রতিবন্ধকতা নিরসন ও যুগোপযোগীকরণ, ক্রস-বর্ডার বাণিজ্য সম্প্রসারণে নীতি সহায়তা প্রদানের উপর জোরারোপ করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি।

তিনি উল্লেখ করেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে আমাদের বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল ডিজিপি’র ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং ২০২১ সালে এডিআই’র পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এমতাবস্থায় বেসরকারি বিনিয়োগ এবং এফডিআই বাড়াতে কর্পোরেট কর কাঠামোর সংস্কার, দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে সব ধরনের সেবাদান নিশ্চিতকরণ একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

কর্পোরেট করের বিষয়ে তিনি বলেন, এলডিসি উত্তোরণের পূর্বে বাংলাদেশের কর্পোরেট কর হার আঞ্চলিক দেশসমূহের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করা প্রয়োজন এবং এলক্ষ্যে তিনি বিদ্যমান কর্পোরেট কর ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যথাক্রমে ৫ শতাংশ ও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে ক্রমান্বয়ে হ্রাসের আহ্বান জানান। তিনি আরো উল্লেখ করেন, এলডিসি উত্তোরণের পর আমাদের রপ্তানিমুখী পণ্যের উপর শুল্ক হার বর্তমানের চেয়ে ৬-৭ শতাংশ বাড়তে পারে, ফলে এখন থেকে আমাদের পণ্যের বহুমুখীকরনের সঙ্গে সঙ্গে বাজার সম্প্রসারণের উপর মনোযোগী হতে হবে। এছাড়া রপ্তানি বাড়াতে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারের প্রতি আমাদের আরো মনোযোগী হওয়ার প্রস্তাব করেন।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, কোভিড মহামারি থাকা সত্বেও ২০২১ সালে আমাদের বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং পণ্য রপ্তানি, রেমিট্যান্স এবং বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে বেশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।

অর্থসূচক/এমএস/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.