নতুন বছরের শুরুতেও রফতানি আয়ে ঊর্ধ্বগতি

নতুন বছরের শুরুতেও রফতানি আয়ে ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত আছে। নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে ৪৮৫ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার (৪.৮৫ বিলিয়ন) ডলার বিদেশি মুদ্রা দেশে এনেছেন রফতানিকারকরা। বর্তমান বিনিময় হার (৮৬ টাকা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৪১ হাজার ৭১৩ কোটি ১৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪১ দশমিক ১৩ শতাংশ।

বুধবার (২ জানুয়ারি) রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রফতানি আয়ের এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

২০২১ সালের জানুয়ারির তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪১ দশমিক ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে এই জানুয়ারিতে পণ্য রফতানি থেকে ৪১ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে। এ সময় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় এসেছে প্রায় ২০ শতাংশ। রফতানি আয়ের এই ঊর্ধ্বগতিতে বরাবরের মতোই প্রধান ভুমিকা রেখেছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এই আয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ; আগের মাস ডিসেম্বরে একটু বেশি ৪৯০ কোটি ৭৭ লাখ (৪.৯০ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছিল।

করোনার ধাক্কা সামলে তৈরি পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়তই আশার আলো দেখাচ্ছে দেশের রফতানি আয়। তবে, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে করোনার নতুন ধরণ অমিক্রণের সংক্রমণ অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। যা তৈরি পোশাক খাতের রফতানির অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে আসতে পারে।

ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সামগ্রিকভাবে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ মাসে ২ হাজার ৯৫৪ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, যা দেশীয় মুদ্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি। এ আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে তা আলোচ্য সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১৬ শতাংশ বেশি।

ইপিবির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত তৈরি পোশাক, বিশেষত, নিটওয়্যার পণ্য রফতানি বেড়েছে। এছাড়া চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষি, প্লাস্টিক পণ্য রফতানি ইতিবাচক ধারায় ফেরার কারণে সার্বিকভাবে পণ্য রফতানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, তৈরি পোশাকের পাশাপাশি হিমায়িত খাদ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশল পণ্যের রফতানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিকভাবে পণ্য রফতানি বেড়েছে। যদিও আলোচ্য সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি কমেছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে ২ হাজার ৩৯৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ আয় গত বছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ের তুলনায় ৩০ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। বেশ কয়েক মাস পর নিটের পাশাপাশি ওভেন পোশাকের রপ্তানিও বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে ১ হাজার ৩২৭ কোটি ডলারের নিট পোশাক রফতানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। অন্যদিকে ওভেন পোশাক রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৭১ কোটি ডলারের। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ২৩ শতাংশ।

তৈরি পোশাকের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রফতানি হয়েছে হোম টেক্সটাইল পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে ৮৩ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে। এ আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ রফতানি আয় হয়েছে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৭৪ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। তবে আলোচ্য সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি কমেছে।

রফতানি উপাত্ত অনুযায়ী পোশাক খাতের রফতানির ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা গেলেও সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামাল, পণ্য জাহাজীকরণ খরচ, রং ও রাসায়নিক দ্রব্যের বাজার অনেক চড়া। কিন্তু পণ্য উৎপাদন খরচ বাড়ার অনুপাতে পোশাকের দাম সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বাড়ছে না। এছাড়া আমাদের পোশাক রফতানির প্রধান বাজারগুলোতে কোভিডের নতুন ভ্যারিয়েন্ট অমিক্রণের সংক্রমণও বাড়ছে। এর ফলে তৈরি পোশাক খাত নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।

অর্থসূচক/এমএস/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.