‘প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার অভাবে প্রণোদনা প্যাকেজ যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি’

প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার অভাবে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও র‌্যাপিড’র চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক। তিনি বলেন, বড় ও সংগঠিত খাতগুলো বেশি প্রণোদনা পেয়েছে। তবে অসংগঠিত খাতগুলো যে যথাযথ প্রণোদনা পায়নি তার মূল কারণ প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা।

শনিবার (২৯ জানুয়ারি) দি এশিয়া ফাউন্ডেশন, গবেষণা সংস্থা রিসার্চ এন্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড) ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন। কোভিড মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত প্রণোদনা কর্মসূচির পর্যালোচনা করতে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

মূল প্রবন্ধে এম এ রাজ্জাক বলেন, সরকার বেশ দ্রুততার সঙ্গে ২০২০ সালে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। এতে দেখা যায়, সে বছর বিশ্বের অধিকাংশ বড় অর্থনীতির সংকোচন হলেও যে কয়টি দেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে বাংলাদেশে তার মধ্যে অন্যতম। সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্য ছিল। বিশেষ করে রফতানি খাত দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এতে অনেক মানুষের ক্ষতি বৃদ্ধি হয়নি।

প্রণোদনা প্যাকেজ সম্পর্কে তিনি বলেন, এই প্যাকেজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিয়ে যতো আলোচনা হয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা নিয়ে ততো আলোচনা হয়নি। বিষয়টি হলো, বড় ও সংগঠিত খাত বেশি প্রণোদনা পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তার মানে এই নয় সরকার তাদের প্রতি পক্ষপাত করেছে। সংগঠিত বলেই তারা বেশি পেয়েছে। এটা নেতিবাচক নয়।

তবে, অসংগঠিত খাতগুলো যে যথাযথ প্রণোদনা পায়নি তার মূল কারণ প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা। যেমন ২০২০ সালে সরকার যে ৫০ লাখ মানুষকে আড়াই হাজার টাকা নগদ প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল, যথাযথ তথ্য ভান্ডারের অভাবে সেই ৫০ লাখ মানুষের কাছে শেষ পর্যন্ত সরকার পৌঁছাতে পারেনি। সে জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার বিষয়টিতে তিনি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিকে যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় চূড়ান্ত মুহূর্তে আমরা অনেক কিছু করে ফেলি, তখন ঠিক চিন্তা ভাবনা করে কাজ করা যায় না, কোভিড মোকাবিলার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। এখন সময় এসেছে এসব পর্যালোচনা করার। সবক্ষেত্রেই জবাবদিহির প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের কোভিড নীতির যে পর্যালোচনা ও সমালোচনা করেছে, তিনি তা সাদরে গ্রহণ করেন।

বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব দেশ কোভিডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের অর্থনীতি ২০২০ সালে অনেকটাই সংকুচিত হয়েছে। সেজন্য প্রতিবেশীদের তুলনায় বাংলাদেশে কোভিড মোকাবেলায় কেমন করেছে, তা নিরূপণে গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানান এম এ মান্নান।

প্রণোদনার বিষয়ে একটু ভিন্ন মত পোষণ করেন অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ। তিনি বলেন, ব্যাংকের কাছে সেই গ্রাহক বেশি গুরুত্বপূর্ণ যার ক্ষতি হয়েছে হয়তো ৩০ শতাংশ, অন্যদিকে যার ক্ষতি হয়েছে ৭০% তিনি ব্যাংকের কাছে ভালো গ্রাহক নন। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, যার ক্ষতি হয়েছে ৭০%, প্রণোদনা তারই বেশি প্রয়োজন। আর প্রণোদনা দেওয়ার সময় বলে দেওয়া হয়েছিল, ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যকার সম্পর্কের ভিত্তিতে এই প্রণোদনা ঋণ দেয়া হবে। ফলে যাকে দিনটা বেশ সুবিধাজনক মনে করেছে ব্যাংক তাকে দিয়েছে।

অর্থনীতির পাশাপাশি শিক্ষণ ক্ষতি নিয়েও আলোকপাত করেন নাজনীন আহমেদ। তিনি বলেন, দীর্ঘ দেড় বছর বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষণের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। এই ক্ষতিপূরণের সরকারের বিশেষ উদ্যোগ থাকা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

করোনা মহামারিতে শহরের দরিদ্র মানুষের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অথচ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি মূলত গ্রামীণ দরিদ্রদের লক্ষ্য করে। সে কারণে বক্তারা মনে করেন এখন শহরের শ্রমজীবী মানুষদের জন্য আলাদা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রণয়ন করা উচিত। এর সঙ্গে এসডিজির যোগ থাকা উচিৎ বলে তারা মত দেন।

ইআরএফের সভাপতি শারমিন রিনভির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খাইরুজ্জামান মজুমদার, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদ আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম নূরুল আলম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য কাউসার আহমেদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক রাশিদুল ইসলাম।

অথূর্সচক/এমএস/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.