পেপারলেস ডিএসইর যাত্রা শুরু

চিঠি, ফাইলিং তথা কাগজপত্রের পুরো প্রথা বাদ দিয়ে পেপারলেস স্টক এক্সচেঞ্জ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) লিমিটেড।

আজ বুধবার (২৬ জানুয়ারি) ডিএসই মিলনায়তনে অনলাইনে সব কাজকর্মের উদ্বোধন করেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী। এতে বিশেষ অতিথি ছিলে ডিএসইর পরিচালক সালমা নাসরীন। প্যানেল আলোচক হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশেনের (ডিবিএ) সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান ও ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) সভাপতি জিয়াউর রহমান। ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আমিন ভূঁইয়া আলোচনাচি সঞ্চালনা করেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, নতুন এই যাত্রার ফলে এখন থেকে ধারাবাহিকভাবে ডিএসইতে কাগজে চিঠিপত্রের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে। এরই মধ্যে ডিএসইর কিছু বিভাগে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। যা ধীরে ধীরে সব স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে শুরু করবে।

তাতে ডিএসইসহ সব স্টেকহোল্ডারদের এক দিকে সময় বাঁচবে, অন্যদিকে বাঁচবে আর্থিক ব্যয়ও। কারণ এই ট্রাফিক জ্যামের শহরে চিঠিপত্র আদান-প্রদান করতে প্রচুর সময় ও অর্থের ব্যয় হয়। পাশাপাশি কাগজপত্র কিংবা নথিপত্র জমা রাখতে আলাদা স্টোর রুম দরকার হয়। এখন থেকে এসবের দরকার হবে না। সব কিছুই হবে অনলাইনে। তবে এক্ষেত্রে পুরো সিস্টেমের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ বিএসইসির সঙ্গে ডিএসইর এবং ডিএসইর সঙ্গে অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান প্রদান করা হয়। যার গোপনীয়তা খুবই জরুরি।

যাত্রা শুরুর আগে পেপারলেস ডিএসই শীর্ষক আলোচনা হয়। এতে প্যানেল আলোচকরা বক্তব্য রাখেন। আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএসইর চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, ডিএসইতে আসার আগে শুনতাম এখানে শতভাগ অটোমেটেড সিস্টেম। কিন্তু পরে দেখলাম বাস্তবে তা নেই। তবে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন পুঁজিবাজারকে ডিজিটালাইজেশন করার জন্য অনেক কাজ করেছে।

ইউনুসুর রহমান বলেন, ‘আশার কথা হচ্ছে, আমরা ডিএসইর পক্ষ থেকে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে একটি ভালো অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছি। আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে অন্যান্য দেশের তুলনায় একটি অত্যাধুনিক প্ল্যাটফর্ম হবে ডিএসই।

তিনি আরো বলেন, ‘দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলেও দুটি খাত এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। এর একটি পুঁজিবাজার অন্যটি বিমা খাত। এ দুটি খাত সামনে নিয়ে আসতে না পারলে দেশের টেকসই উন্নয়ন কঠিন হয়ে পড়বে।’

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, পেপারলেস সিস্টেমের কারণে সময় বাঁচবে, ব্যয় কমবে। এতে স্টক এক্সচেঞ্জেরকাজে আরও বেশী গতি আসবে। আর এর সুফল পাবে ডিএসইসহ পুরো পুঁজিবাজার।

তিনি এই সিস্টেমে ডাটার গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার ঝুঁকির বিষয়টি উল্লেখ করে তা নিরসনে বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

ডিবিএ সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, পেপারলেস পদ্ধতি শুধু এক্সচেঞ্জের কাজের দক্ষতাই বাড়াবে না, এটি পরিবেশ সংরক্ষণেও ভূমিকা রাখবে। কারণ কাগজের ব্যবহার পরিবেশের উপর চাপ তৈরি করে।

সিএমজেএফ সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, যে কোনো সফটওয়্যার বা সিস্টেমের সর্বোচ্চ সুফলপ্রাপ্তি নির্ভর করে এর ব্যবহারকারীদের দক্ষতা, নিষ্ঠা ও কমিটমেন্টের উপর। তাই ডিএসইকে এই বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

ডিএসইর এমডি তারিক আমিন ভূঁইয়া বলেন, ক্লাউডভিত্তিক অনলাইনে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে আমরা পেপারলেস ডিএসইর যাত্রা শুরু করেছি। ক্লাউডভিত্তিক তথ্য আদান-প্রদানে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি আছে, তবে কম।

তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে ডিএসইতে বিভিন্ন নির্দেশনা ও নথিপত্র সবই এখন হবে ডিজিটালি। ফলে কোনো কর্মকর্তা ছুটিতে বা দেশের বাইরে থাকলেও ডিএসইর জরুরি কাজে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না।’

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.