ব্যাংকারদের বেতন কাঠামো বাস্তবায়নে সময় চায় ব্যাংকগুলো

বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বিএবি-এবিবির বৈঠক

ব্যাংকারদের ন্যূনতম বেতন কাঠামো বাস্তবায়নে সময় চায় ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)।

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টার বৈঠক শেষে বিএবির নেতারা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

বাংলাদেশ ব্যাংকও বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে। বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখমাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ‘নির্দেশনা কার্যকরে বাড়তি সময়ের দাবি ভেবে দেখা হবে। প্রজ্ঞাপন বিষয়ে যেসব অস্পষ্টতা ছিল উভয় পক্ষের আলোচনায় তা পরিস্কার করা হয়েছে।’

এন্ট্রি পর্যায়ের বেতন-ভাতা নির্ধারণ ও পদোন্নতি, চাকরিচ্যুতি বিষয়ে ২০ জানুয়ারি নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগামী মার্চ থেকে ব্যাংকের এন্ট্রি পর্যায়ে সর্বনিম্ন বেতন ২৮ হাজার টাকা এবং শিক্ষানবিসকাল শেষে ৩৯ হাজার টাকা। সেখানে শুধু আমানত সংগ্রহের লক্ষ্য অর্জন করতে না পারায় কাউকে পদোন্নত বঞ্চিত বা চাকরিচ্যুত করার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।

তবে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই নির্দেশনার ‘পদোন্নতি ও চাকরিচ্যুত’ বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। এ কারণে গতকাল মঙ্গলবার আবার স্পষ্ট করে নতুন প্রজ্ঞাপন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

সেখানে বলা হয়, ‘অদক্ষতার কারণে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা যাবে না বা অদক্ষদের পদোন্নতি দিতে হবে-এমন কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। চাকরিচ্যুতির ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রমাণিত অভিযোগ থাকতে হবে। শুধু আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারা বা কোনো ধরনের প্রমাণিত অভিযোগ ছাড়াই অদক্ষতার অজুহাত দেখিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত অথবা চাকরিচ্যুত অথবা পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না।’

এ নির্দেশনা কার্যকর করতে গিয়ে ব্যাংকগুলো চাপে পড়বে বলে ব্যাংক মালিকরা মনে করেন। ফলে এসব উদ্বেগের বিষয় জানাতে আজ বুধবার গভর্নর ফজলে কবিরসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবি এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সংগঠন এবিবি বৈঠক করেন। বৈঠকে বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছাড়াও কয়েকজন এমডি উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সভায় ব্যাংক উদ্যোক্তারা ব্যাংকারদের চাকরি শুরুর পর্যায়ে বেতন-ভাতা নির্ধারণ, ঋণ আমানতে সুদহার বেঁধে দেয়া, ছাঁটাই-পদোন্নতি, ঋণ পরিশোধ না করেও খেলাপিমুক্ত থাকাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা নির্দেশনা নিয়ে বৈঠক করেন।

ওই সভায় বলা হয়, করোনার মধ্যেও বেশিরভাগ ব্যাংক ভালো কর্মীদের ধরে রাখতে বেতন বৃদ্ধিসহ নানাভাবে উৎসাহিত করছে। ভালো কাজ করা ব্যাংকারদের শুধু অন্য ব্যাংক নয়, অন্য প্রতিষ্ঠানও বেশি বেতন দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে ঢালাওভাবে সবাইকে পদোন্নতি দেয়া হলে তাতে এ খাতের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। এসব বিবেচনায় না নিয়ে চাকরি স্থায়ী করা ও বার্ষিক বেতন বাড়ানোর জন্য আমানত সংগ্রহের লক্ষ্য অর্জনে শর্ত আরোপ না করার নির্দেশনা আপত্তিকর।

বৈঠকে আরও জানানো হয়, করোনার কারণে ঋণ পরিশোধে ছাড় ওঠে যাওয়ার পর ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাবে। এ নিয়ে তারা যখন দুশ্চিন্তায়, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক নানাভাবে আন্তর্জাতিক চর্চাবহির্ভূত সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। এসব বিষয়ে তারা উদ্বেগও প্রকাশ করেন।

অর্থসূচক/এমএস/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.