৩ চ্যালেঞ্জে দেশের ব্যবসা খাত: সিপিডি

বর্তমানে দেশের ব্যবসাখাত তিনটি বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। চ্যালেঞ্জগুলো হলো দুর্নীতি, প্রশাসনিক অদক্ষতা ও অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা।

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির প্রধান কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপের ফলাফল তুলে ধরে সিপিডি। ‘বাংলাদেশে ব্যবসা পরিবেশ ২০২১ উদ্যোক্তা জরিপ ফলাফল’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ সময় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অনুষ্ঠান পরিচালনা কওেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি জানিয়েছে, ব্যবসায় পরিবেশ জরিপের সময়কাল ছিল গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই। দেশের ৭৩টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছিল, যাদের মূলধন ছিল ১০ কোটি টাকার ওপর। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ফরিদপুর এলাকায় অবস্থিত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১০টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। কৃষি, সেবা ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের ব্যবসায়ীদের ওপর জরিপটি করা হয়।

জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ৬৮ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন, তাঁদের ব্যবসায় প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো দুর্নীতি। লাইসেন্স নিতে গিয়ে, কর দিতে গিয়ে এবং বিভিন্ন পরিষেবার জন্য গেলে সেখানে আর্থিক লেনদেন করতে হয়। ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ী তাঁদের ব্যবসার পথে অদক্ষ আমলাতন্ত্রকে দায়ী করেছেন। টাকা পাওয়ার সুযোগ সীমিত থাকার কথা বলেছেন ৫৫ শতাংশ ব্যবসায়ী। এর পরে আছে যথাক্রমে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, ঘনঘন নীতিবদল।

এর আগে ২০২০ সালেও ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে একটি জরিপ করেছিল সিপিডি। তখন ব্যবসা করার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হিসেবে উঠে এসেছিল অদক্ষ প্রশাসন। ওই সময় ব্যবসায়ীরা দুর্নীতিকে দ্বিতীয় ও সীমিত অর্থের সুযোগকে তৃতীয় প্রতিবন্ধকতার কথা বলেছিল। এবারের জরিপে দুর্নীতি এক নম্বর অবস্থানে উঠে এসেছে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দুর্নীতি, অদক্ষ প্রশাসন ও সীমিত অর্থের সুযোগ -এ ত্রয়ী চ্যালেঞ্জ ব্যবসায়ীদের মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে ব্যবসার খরচ বাড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে ভোক্তার ওপর।

জরিপে দেখা গেছে, ২৮ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন, করোনার প্রভাবে তাঁদের খরচ কমাতে হচ্ছে। আর খরচ কমাতে গিয়ে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটছে।

আগামী ১০ বছরে দেশে নতুন কী কী ব্যবসা উঠে আসবে তারও একটি ধারণা পাওয়া গেছে জরিপে। দেখা গেছে, ৬৭ শতাংশ বলেছে, ডিজিটাল আর্থিক সেবা আরও বিকশিত হবে। দক্ষ মানবসম্পদ খাতকে দ্বিতীয় অবস্থানে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। তৃতীয় অবস্থানে আছে ডেটা ম্যানেজমেন্ট।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, করোনা মহামারির কারণে তাঁদের ব্যবসা পুনরুদ্ধারে আরও তিন বছর সময় লাগবে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে ব্যবসায়ীরা এখনই ফিরে এসেছেন-এটা বলা যাবে না বলে মন্তব্য করেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

সিপিডি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, মানবাধিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে, এ নিয়ে যদি জটিলতা তৈরি হয়, তাহলে ব্যবসায় দীর্ঘমেয়াদে আশঙ্কা তৈরি হবে। করোনার পর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হচ্ছে এটা ঠিক, কিন্তু সে পুনরুদ্ধার অন্তর্ভুক্তিমূলক হচ্ছে না। একধরনের বৈষম্যমূলক পুনরুদ্ধার হচ্ছে। এ বিষয়টি সরকারের নীতিকাঠামোতে চিন্তা করতে হবে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দুর্নীতি, অদক্ষ প্রশাসন ও আর্থিক সীমাবদ্ধতা বড় ব্যবসায়ীদের খুব একটা সমস্যা করছে না। সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়ছেন ক্ষুদ্র, মাঝারি ও প্রান্তিকে যাঁরা ব্যবসা করছেন তাঁদের।

 

অর্থসূচক/এমএস/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.