‘দেশের অর্থনীতির মূল ঝুঁকি কর্মসংস্থান ও জীবিকার সংকট’

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈশ্বিক ঝুঁকি প্রতিবেদন ২০২২-এ বলা হয়েছে, চলতি বছর বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা হবে কর্মসংস্থান ও জীবিকার সংকট।

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) তারা ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। প্রতিবেদনে তারা শতাধিক দেশের প্রধান চারটি ঝুঁকি চিহ্নিত করেছে। অর্থনৈতিক ঝুঁকির পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক এবং –পরিবেশগত ঝুঁকির কথাও উঠে এসেছে এই প্রতিবেদনে।

সংবাদ সম্মেলনে সংশ্লিষ্টরা বলেন, কোভিডের অভিঘাতে দেশে কত মানুষের আয় কমেছে বা কত মানুষ কাজ হারিয়েছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। সরকার এ নিয়ে বিশেষ জরিপ করেনি। আবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব জরিপ করেছে, তার ফলাফল সরকার মেনে নেয়নি। তবে এবার এই সংকটের কারণে প্রবৃদ্ধি আরও বেশি বৈষম্যমূলক হয়ে ওঠে বলে অর্থনীতিবিদরা এ মন্তব্য করেন।

তারা বলেন, সানেম ও ব্র্যাক বিআইজিডি গত প্রায় দুই বছরে কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য নিয়ে ধারাবাহিক জরিপ করেছে। তাদের জরিপে একটি বিষয় পরিস্কার, দেশের অনেক মানুষের আয় কমেছে। অনেক মানুষ আবার তুলনামূলকভাবে উচ্চ দক্ষতার কাজ থেকে নিম্ন দক্ষতার কাজ নিতে বাধ্য হয়েছেন। এমনকি অনেক মানুষ সেই যে কোভিডের শুরুতে ২০২০ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে গ্রামে গিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই শহরে ফেরেননি। এই মানুষদের জন্য সরকার ইতিমধ্যে বিশেষ প্রণোদনা তহবিল গঠন করেছে। কর্মসংস্থান ও জীবিকার প্রসঙ্গ যে বাংলাদেশের মানুষের বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈশ্বিক ঝুঁকি প্রতিবেদনে তারই প্রমাণ পাওয়া গেছে।

তার সঙ্গে যোগ হয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ে প্রতিবেদনে বিশেষ কিছু উল্লেখ না থাকলেও এ কারণে দেশের দরিদ্র ও অরক্ষিত মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন। এর পরিণতিতে দেখা গেছে, এই মানুষেরা খাদ্য ব্যয় কমিয়েছেন, যার প্রভাব পড়ছে শিশুদের ওপর।

২০২০ সালের তুলনায় পণ্যমূল্য এখন ৩০ শতাংশ বাড়তি। জ্বালানি সংকট নিয়ে ইউরোপ, রাশিয়া ও চীনের দ্বন্দ্বের কারণে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। তবে এখন সারাবিশ্বে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা যাচ্ছে, তার প্রধান কারণ সরবরাহ সংকট। অর্থাৎ এই মূল্যস্ফীতি চাহিদাজনিত নয়, বরং সরবরাহজনিত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরবরাহ সংকট ২০২২ সালেও চলবে। অর্থাৎ আইএমএফসহ অন্যান্য বৈশ্বিক সংস্থা বলে আসছিল, এ বছরের মাঝামাঝি নাগাদ মূল্যস্ফীতি কমে আসবে, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম তা মনে করছে না।

কর্মসংস্থান ও জীবিকার পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য আরেকটি বড় ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতিবেদনে। সেটা হলো, দেশের কৌশলগত সম্পদের ভূরাজনীতিকিকরণ। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলা না হলেও এটা স্পষ্ট যে দেশের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে স্থাপনা নির্মাণে এশিয়ার বৃহৎ দুটি দেশের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে, তার দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। এই প্রতিযোগিতার সুবিধা হচ্ছে, বাংলাদেশ এখন বড় প্রকল্পে সহজেই বিনিয়োগ পাচ্ছে। কিন্তু এই পরিস্থিতি দীর্ঘদিন চললে উন্নয়নের পরিবেশ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অন্যান্য যেসব ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো হলো পরিবেশ বিপর্যয়, সাইবার দুর্বলতা, ডিজিটাল অসমতা ইত্যাদি। বিশ্বের প্রায় এক হাজার বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন খাতের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এই জরিপ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সভাপতি বোর্হে বেন্দে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিয়া জাহিদি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সাদিয়া জাহিদি বলেন, বিশ্বের পরিস্থিতি নিয়ে অধিকাংশ মানুষই আশাহত। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৮৪ শতাংশ মানুষই বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন। মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ আশাবাদী।

অর্থসূচক/মৃত্তিকা সাহা/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.