‘চলতি অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৫১ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে’

চলতি অর্থবছরে রপ্তানির মোট লক্ষ্যমাত্রা ৫১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। একই সঙ্গে ২০৩০ সালের আগেই এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব।

যদি আমাদের বিপুল জনগোষ্ঠীকে ব্যবসা-বাণিজ্য তথা উৎপাদনশীল কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করতে পারি তাহলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।

শনিবার (১ জানুয়ারি) সকালে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে “২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা-২০২২” উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভিসি এ এইচ এম আহসান, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দীন। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. হাফিজুর রহমানসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সিনিয়র কর্মকর্তারা।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি আরও বলেন, বাংলাদেশ আজ অগ্রসর এক জাতি। পৃথিবীর কাছে এখন রোল মডেল। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্বের জন্য। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেটা পারেনি তারা। বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার পরিশ্রমের ফল আজকের বাংলাদেশ। আমরা এভাবে চলতে থাকলে ২০২৬ সালে গ্রাজুয়েশন ও ২০৩০ সালের জন্য যে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল তা অত্যন্ত দুই বছর আগেই আমরা অর্জন করতে পারবো।

তিনি বলেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত অর্থনীতির দেশ হবে। তখন মাথাপিছু আয় সাড়ে ১২ হাজার আসবে। একই সঙ্গে ২৬তম অর্থনীতির দেশ হবে। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা এগিয়ে চলছি।

তিনি আরও বলেন, বাণিজ্যমেলাতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পণ্য এসেছে। আমাদের রপ্তানি বেড়েছে। ৫১ বিলিয়ন ডলারের যে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল আমরা তার থেকে বেশি রপ্তানি করতে পারবো। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা ২০২২ সুন্দরভাব সফলভাবে শেষ করতে পারবো। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই বাংলাদেশ গড়বোই।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এমুহুর্তে বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য বড় জায়গা। কারণ ভিয়েতনামে শ্রমিক স্বল্পতার জন্য আশে পাশের দেশগুলোসহ আমাদের দেশে বিনিয়োগের জন্য আসছে। দেশের ব্যবসাযীরাও তাদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে পারেন। এর ফলে কতগুলো খাত ভালো করবে। এছাড়া ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হয়েছে সেখানেও মানুষের আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। গত কয়েক মাসে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরেছি-দেখেছি সবার উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে। আমার বিশ্বাস ব্যবসায়ী নেত্রীরা যদি একটু একটিভ হন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাঁড়িয়ে আছে আপনাদের সাহায্য করার জন্য। নতুন বছরের এই মাস জুড়ে ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, রপ্তানিকারকরা ক্রেতা দর্শকদের মধ্যে আমাদের সক্ষমতার মেসেজ তুলে ধরবেন।

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যমেলা ২০২২ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে এ মেলার গুরুত্ব অপরিসীম। পণ্যের উন্নতি ও মানোন্নয়ন এবং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উৎকৃষ্ট পণ্য উৎপাদনে এ মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিদেশি দেশগুলো এমেলায় অংশ গ্রহণ করে আমাদের পণ্যের সম্পর্কে ধারণা পাবেন। ফলে আমাদের রপ্তানি বাড়বে বলে আমি বিশ্বাস করি। বাংলাদেশ এখন ব্যাপক সম্ভাবনাময় দেশ। ইতোমধ্যে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ৫০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আমরা এখন ১৯৬টি দেশে ৭শ’র বেশি পণ্য রপ্তানি করছি।

তিনি বলেন, করোনায় সরকারের ব্যাপক প্রণোদনা ও নীতি সহায়তার ফলে আমাদের অর্থনীতির সব সূচক করোনার আগের অবস্থানে পৌঁছে গেছে। আমদানি, রপ্তানি ও বেসরকারি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। গত জুলাই- নভেম্বর পাঁচ মাসে রপ্তানি আয় ২৫ শতাংশ, আমদানি ব্যয় ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। আমাদের একটি খাত থেকেই যদি ৩২ বিলিয়ন ডলার আয়সহ ৪৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়। তাহলে অন্যান্য খাতগুলোর মানোন্নয়ন করে সক্ষম করতে পারলে আগামী এক বছরের মধ্যে রপ্তানি ২০০ থেকে ৩০০ বিলিয়ন ডলারে নেওয়া সম্ভব। একই সঙ্গে যুক্ত হবে বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান।

জানা গেছে, এবারের বাণিজ্যমেলায় ১১টি দেশের ২২৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ গ্রহণ করছে। মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল এবং ১৫টি খাবার দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও মেলায় বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করা হয়েছে। মুজিববর্ষ, মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনারবাংলা বিনির্মাণের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত এক্সিবিশন সেন্টারের এক লাখ ৫৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের দুটি হলে সব স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। করোনা বিবেচনায় নিয়ে মেলা চলাকালীন স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, গতবছরের মতো মেলায় প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ফ্রি। এক্সিবিশন সেন্টারের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২২০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে এবং সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। মেলা ১ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। ছুটির দিন মেলা চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.