সড়কে শৃঙ্খলা আনতে এবং যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ সার্ভিস। নগর পরিবহন উদ্বোধনের পর ঢাকার দুই মেয়র টিকিট কেটে ট্রান্সসিলভার একটি বাসে চড়েন। তারা রাজধানীর শংকর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে নেমে যান। এই পথে তারা ১১ টাকা করে ভাড়া পরিশোধ করেন।
রোববার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের বিআরটিসি ডিপোতে এক অনুষ্ঠানে এই বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনস্থলে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। আর সচিবালয় থেকে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র আতিক বলেন, ‘ঢাকায় নয় হাজার ২৭টি বাস চলাচল করে। সন্ধ্যায় বাস মালিকরা বসেন প্রফিট নিয়ে। আয়ের জন্য বাস চালকদের সঙ্গে পাড়াপাড়ি করেন। এজন্য অনেক প্রাণহানি ঘটে। দিন শেষে এখন আর আয়ের জন্য পাড়াপাড়ি করতে হবে না।’
মেয়র বলেন, ‘আমরা আজ নতুন করে একটি বাস রুট চালু করছি। সেটি হচ্ছে, ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত। সেই পথে যে গাড়িগুলো চলবে। তাদেরকে সব নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। কোনো অভিযোগ থাকতে পারবে না। সেখানে প্রতিটি বাসের কাগজপত্র ঠিক থাকবে। ড্রাইভারের লাইসেন্স থাকবে। প্রতিটি হেলপারের নির্ধারিত পোশাক থাকবে। এই পথের প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া হবে দুই টাকা ১৫ পয়সা আর সর্বনিম্ন ভাড়া হবে ১০ টাকা। যাত্রীরা সুশৃঙ্খলভাবে বাসে উঠবেন। আমরা মনে করি, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরবে।’
অনুষ্ঠানে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘ঢাকা শহরে চলাচল করার জন্য যেসব রুটে পরিবহন মালিকরা পারমিট নিয়েছেন সেই রুটেই বাস পরিচালনা করতে হবে। পারমিটের বাইরে কোনো পরিবহন অন্য রুট ব্যবহার করতে পারবে না। পর্যায়ক্রমে রাজধানীর সব রুটে ঢাকা নগর পরিবহন পরিচালিত হবে। আমাদের আরও কাজ বাকি আছে। রাজধানীর বাইরের বাসের জন্য শহরের বাইরে বাস টার্মিনাল করব। যেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বাস আর শহরের মধ্যে ঢুকতে না পারে।’
দক্ষিণের মেয়র বলেন, ‘এই রুটে কোনো অসুস্থ প্রতিযোগিতা থাকবে না, সুনির্দিষ্ট জায়গায় যাত্রী তোলা হবে। ঢাকাবাসীর কাছে নিবেদন সুশৃঙ্খলভাবে আপনারা বাসে উঠবেন, নির্দিষ্ট জায়গা থেকে বাসে উঠবেন, ই-টিকিটিংয়ের মাধ্যমে বাসে উঠার কথাও বলেন তিনি। আজ আমরা ৫০টি বাস দিয়ে শুরু করেছি, পর্যায়ক্রমে ১০০টি দেব। এরপর প্রয়োজন হলে আরও বাস দেওয়া হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে পুরো ঢাকায় নগর পরিবহন চালু করা হবে।’
নগর পরিবহন উদ্বোধনকালে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি গত ১২ দিন হাসপাতালে ছিলাম। সেখানে থেকে রিলিজ হয়ে বাসায় না গিয়ে সরাসরি মন্ত্রণালয়ে এসেছি। আমি এই উদ্যোগটাকে গুরুত্ব দিয়েছি। আমার উপস্থিতিতে সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমি এই সার্ভিসের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করলাম।’
প্রাথমিকভাবে বিআরটিসির ৩০টি ডাবল ডেকার এবং ট্রান্স সিলভা পরিবহনের ২০টি বাসসহ মোট ৫০টি বাস নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে নগর পরিবহনের। তবে আগামী দুই মাসের মধ্যে এই উদ্যোগে মোট ১০০টি বাস যুক্ত হবে। কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত প্রায় ২৭ কিলোমিটারের এই রুটে রুট পারমিট ছাড়া কোনো বাস চলতে দেওয়া হবে না।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এই রুটের সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা, সর্বোচ্চ ভাড়া ৫৯ টাকা এবং প্রতি কিলোমিটার দুই টাকা ১৫ পয়সা। কেউ এক স্টেশন থেকে উঠে পরের স্টেশনে নামলে তাকে ১০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। আবার এই সর্বনিম্ন ভাড়াতেই তিনি প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটারের বেশি পথ যেতে পারবেন। যেকোনো যাত্রী ১০ টাকার সমান দূরত্ব অতিক্রম করলে তাকে পরবর্তী দূরত্বের জন্য প্রতি কিলোমিটার ২.১৫ টাকা হিসেবে ভাড়া দিতে হবে।
অর্থসূচক/এএইচআর
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.