এবারের বড় দিন বেশি আনন্দময়: আর্চ বিশপ বিজয়

খ্রিস্টানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান যীশু খ্রীস্টের জন্মদিন বা ‘বড়দিন’। প্রতি বছরের মত আগামী ২৫ ডিসেম্বর সারা বাংলাদেশে উদযাপন করা হবে এই দিনটি।
এই উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকার কাকরাইলের আর্চবিশপ হাউজের হলঘরে খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু ঢাকার আর্চবিশপ বিজয় এন, ডি’ক্রুজ ওএমআই বিশেষ বাণী রাখেন।

বাণীতে তিনি বলেন, কোটি কোটি খ্রীষ্টানগণ ২৫ ডিসেম্বর বিশ্বাস ভরা অন্তরে, গভীর আশা ও আনন্দ নিয়ে ক্রিসমাস অর্থাৎ বড়দিন পার্বণ উদযাপন করে।  আজ থেকে ২০২১ বছর পূর্বে ঈশ্বর তনয় মানবজাতির মুক্তিদাতা আশ্চর্যজনকভাবে ওইসব শক্তিতে মেরির কোলে বেথলেমের জীর্ণ গোসলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ বলেন, মানবজাতির প্রতীক্ষিত মুক্তিদাতা প্রভু যীশুর ৩০ বছর বয়সে প্রকাশ্যে তিনি প্রচারকার্য শুরু করেন। তিনি শিক্ষা দেন ঈশ্বর আমাদের সবাইকে ভালোবাসেন। যেমন সূর্যের আলো এবং বৃষ্টির ধারা যেমন সবার ওপর ঝুলে পড়ে ঠিক তেমনই ঈশ্বরের ভালোবাসা সবার জন্য উন্মুক্ত অবারিত।  আমরা যেন একে অপরকে ভালবাসি ক্ষমা করি এবং অন্যের সেবা করি। তিনি নিজেই বলেছেন,আমি সেবা পেতে নয়, সেবা করতে এসেছি।  প্রতিবেশী ভাইবোনদের বিশেষ করে অন্নহীন, বস্ত্রহীন, অসহায় ও গরীব দুঃখী মানুষের যখন আমরা সেবা করি তখন তিনি নিজেই সেবা গ্রহণ করেন। তিনি শিক্ষাদান আমরা যাতে পাপকে ঘৃণা করি পাপীকে নয়।  যীশু বলতেন তিনি জগতে এসেছেন পাপীদের জন্য কারণ অসুস্থদের ওই ডাক্তার প্রয়োজন সুস্থদের জন্য নয়। পৃথিবীতে থাকাকালীন অবস্থাতে তিনি অনেক আশ্চর্য কাজ করেছেন; অন্ধকে দৃষ্টি দিয়েছেন কালাকে দিয়েছেন শোনার ক্ষমতা নুলাকে দিয়েছেন হাটার শক্তি এমনকি মৃতকে দিয়েছেন জীবন। তিনি বাণী প্রচার এর মধ্য দিয়ে এ জগতে চেয়ে ঐশ্বর্য সূচনা করেছিলেন তার প্রধান মূল্যবোধগুলো হলো ন্যায্যতা শান্তি ও পবিত্রাত্মায় নির্মল আনন্দ। এই মূল্যবোধগুলো যেখানে বিরাজ করে সেখানে ঈশ্বর বিদ্যমান থাকেন।

তিনি তার বাণীতে আরও বলেন, এ বছরেই বড়দিন আমাদের জন্য আরো আনন্দের কারণ আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছি। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি আমাদের জন্য একটি শ্রেষ্ঠ উপহার দান করেছেন- একটি স্বাধীন দেশ দান করেছেন। আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। স্বাধীনতা আমাদের অহংকার ও গর্ব। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক সংবিধানের মধ্য দিয়ে বিশ্বে অসাম্প্রদায়িকতার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কেন্দ্রের মধ্যে ছিল নিঃস্বার্থ প্রেম ও গভীর ভালোবাসা, যে ভালোবাসা তার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তুলেছে। আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি যে সব ধরনের কাজ ও সেবার প্রধান উৎস হলো ভালোবাসা। ভালোবাসায় মানুষের জীবনে পূর্ণতা এনে দেয়। ভালোবাসায় আমাদের অসাম্প্রদায়িক ও সার্বজনীন করে। খ্রিস্টানদের ঈশ্বরের অন্য নাম হলো ভালোবাসা। যে ভালোবাসে না সেই স্বর কে জানে না, যে অন্যদের ভালোবাসে ঈশ্বর তার অন্তরে বাস করেন।

সবশেষে তিনি বলেন, এ বছর বাংলাদেশে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করেছে। বঙ্গবন্ধু এই দেশটা সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন।  যে দেশে থাকবে না দরিদ্রতা অভাব-অনটন অন্যায় অবিচার নির্যাতন ও বঞ্চনা।  এটা হবে সুখী, ন্যায়ভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক ও সমৃদ্ধশালী একটি দেশ। সবাই সমঅধিকার নিয়ে বেঁচে থাকবে। থাকবে না কোনো সাম্প্রদায়িকতা। এ ৫০ বছরে বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যাতায়াত ব্যবস্থা ও জ্ঞান বিজ্ঞানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশের খ্রিস্টীয় সমাজ সক্রিয়ভাবে দেশ ও জাতি গঠনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুবই মানসম্মত এবং যীশুর মূল্যবোধের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা ও গঠন দান করে যাচ্ছে। আমাদের হাসপাতাল ও ডিসপেনসারি দরিদ্রদের স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে। নারী ক্ষমতায়ন এবং কারিতাসের উন্নয়ন ও কল্যাণমূলক জাতি-ধর্ম-বর্ণ সবার জন্য নিবেদিতভাবে করে যাচ্ছে।

এসময় আর্চবিষপ খ্রিস্টান ধর্মগুরু বিজয় এন ডি’ক্রুজ ছাড়াও হলরুমে উপস্থিত ছিলেন খ্রিস্টান কমিউনিকেশন সেন্টারের পরিচালক রেভারেন্ড অগাস্টিন বুলবুল রেবারিও।

অর্থসূচক/এমআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.