পুঁজিবাজারের মজা ফিরে আসছে-বিএসইসি চেয়ারম্যান

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, পুঁজিবাজারের যে মজা রয়েছে সেটা মাঝখানে বিভিন্ন ধরনের হয়রানি, যোগাযোগের ঘাটতি ও বাজে সেবার জন্য নষ্ট হয়ে যাওয়াতে মানুষ এদিকে আসতো না। কিন্তু সেটা ফিরে আসতে শুরু করেছে, আমরা অনেক ধরনের প্রোডাক্ট নিয়ে আসছি। তাই আজকের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাগত জানাচ্ছি যে আপনারা পুঁজিবাজারে আসেন।

তিনি বলেন, আমাদের বর্তমান সরকার খুবই ব্যবসা বান্ধব। আমাদের অবস্থান থেকে যখন সরকারের সকল পর্যায়ে কোন আলোচনা করি তখন সব সময়ই এই বিষয়টা নিয়ে আসি যে ব্যবসাকে সাহায্য করতে হবে। এখানে অনেক ভালো মানুষ আছে তাই আমাদেরকে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে। তবে এখানে কিছুটা সমস্যা হয়। ৯৫% ভালো মানুষের মধ্যে ৫% দুষ্টু লোক থাকে, সেই ৫% দুষ্ট লোকের কারণেই আমাদের সকল সমস্যা তৈরি হয়।

মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমিশনার অধ্যাপক শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান।

অনুষ্ঠানে ঋণ খেলাপি বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ব্যবসায়ীদের জোরপূর্বক খেলাপি বানাচ্ছি পৃথিবীতে ভাগ্যবান লোক ছাড়া খুব কম লোকই নিয়মিতভাবে কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে পারেন। এটা সম্ভবই না। সুতরাং, আমরা মানুষকে ডিফল্ডার বানিয়ে ফেলছি। আজকে ব্যাংকের মন্দ ঋণ নিয়ে যে কথা হয়, এখানে সবাই কিন্তু ঋণ নিয়ে পালিয়ে যায়নি। তাদেরকে আমরা বাধ্য করেছি ডিফল্ডার হতে।

তিনি বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরের ওপর আর কত ঋণের চাপ দিবেন? এটা তো ব্যাংকের জন্য ডাবল ঝামেলা। ঝামেলা এই কারণে যে, ব্যাংকগুলো যদি ব্যবসায়ীদের দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দিয়ে ফেলে উনারা কীভাবে তারল্য ম্যানেজ করবে? ব্যাংকগুলো এফডিআর করে সর্বোচ্চ তিন বছরের জন্য আর ঋণ দিচ্ছেন ১০ বছরের জন্য।

তিনি আরও বলেন, আপনার কাছে যদি ১০০ টাকার থাকে তার মধ্যে ৬০ টাকা ১০ কিংবা ১৫ বছরের জন্য দিয়ে দিলেন, এই সময়ে মধ্যে ‍যদি এই টাকা তুলতে চায়, আপনি (ব্যাংক) এই টাকা কোথা থেকে দেবেন? যে ব্যবসায়ী ১০-১৫ বছর মেয়াদী ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন তিনি তো বিপদে পড়ছেন। কোন মানুষ, ব্যবসায়ী কিংবা প্রতিষ্ঠান নিয়মিত ঋণ দিতে পারবে? বলতে পারবে যে ১০ বছরে তাদের কোনো সমস্যা হবে না।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকার খুবই দয়ালু, সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। তারপরও আজ মন্দ ঋণের পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকার উপরে। আজকে যদি বলা হয়, রিশিডিউলিং জীবনে একবারের বেশি দেওয়া হবে না। অথবা ৫ বছরের বেশি একবার যাবে না। তাহলে কোথায় যাবে নন-পারফর্মিং লোন। ব্যাংকিং সেক্টর কলাপস (ধস) হয়ে যাবে। এই জিনিসটিকে নিয়ে যে আমরা কি ঝুঁকি নিয়ে এগোচ্ছি। কত বছর যাবত করছি, এভাবে আর কত দিন যাবত চলবে।

পুঁজিবাজার হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগের সমস্যার সমাধান আর ব্যাংক হচ্ছে স্বল্প মেয়াদী ঋণের জায়গা এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ব্যাংকগুলো স্বল্প মেয়াদে ঋণ দিবে, ক্রেডিট কার্ডের ব্যবসা করবে, ব্যবসা ভালো করবে। ভালো ব্যবসা করলে আপনাদের সমস্যা শেষ হয়ে যাবে, ঋণের সুদ কমে আসবে। মন্দ ঋণ কমে আসবে। আর মন্দ ঋণ কমে আসলে কস্ট অফ ফান্ড কমে আসবে। তখন আর তাদের দরকার নেই অতিরিক্ত সুদ চার্জ করার।

যখন ঋণের অতিরিক্ত সুদ চার্জ করে আর আপনার ব্যবসার অবস্থা খারাপ থাকে। জীবন ও ব্যবসা বাঁচানোর জন্য, পাওনাদার কাছ থেকে বাচার জন্য যে কোনো রেইটে যে কোনো জায়গা থেকে ঋণ নিচ্ছেন। এবং এই সময়ে যদি কেউ বুঝতে পারে যে আপনি বিপদে পড়েছেন, কিসের ৯ শতাংশ সুদ তখন ১৫-২০ শতাংশ সুদে ব্যাংক কিংবা প্রাইভেট মানুষের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা চালাতে হয়।কারণ আপনি তখন বিপদে। আপনার আর কোনো উপায় নেই। এখন আপনি যদি ১৫-২০ শতাংশ ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেন। তাহলে বলেন, পৃথিবীতে কোন ব্যবসায় ১৫-২০ শতাংশ ব্যবসায় হয়। যদি হতো সবাই এই ব্যবসাই করতো। ১৫-২০ শতাংশ মুনাফা করা এই যুগে অসম্ভব। আমরা এই জিনিসগুলো করেই কিন্তু ব্যবসায়ীদের জোরপূর্বক ডিফল্ডার বানাচ্ছি। আমরা ব্যাংকগুলো থেকে তাকে ১৫ শতাংশ সুদ দিচ্ছি সেতো দিতে পারবে না।আমরাও জানি আপনিও জানেন কিন্তু তারপরও দিচ্ছি। তার মানে, সে ফোর্স ডিফল্ডার, আপনি মন্দ ঋণের মালিক হয়ে গেলেন। এই জন্য কস্ট অফ ফান্ড কমানোর জন্য আপনাকে মন্দ ঋণ কমাতে হবে। মন্দ ঋণ তখনি কমবে, যখন ব্যাংকিং সেক্টরের উপর অযৌক্তিক বোঝা হবে না।  সেই জন্য পুঁজিবাজারকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছি। দীর্ঘমেয়াদী ঋণের সমস্যায় পুঁজিবাজারে আমরা হরেক রকম পণ্য নিয়ে আসছি।

করপোরেট কালচারের আরেক মজা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে আসলে করপোরেট কর কমে আসবে। তাতে সমাজের মর্যাদা বাড়বে। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির মত এত বড় সম্মানের জায়গা আর কোথাও নেই।

পুঁজিবাজারে ১০০ জনের ৫ জন দুষ্ট লোক। এই দুষ্ট লোকদের নিয়ে যত সমস্যা। তাদের জন্য তো ৯৫ জনের সমস্যা হতে দেওয়া যাবে না। তাই আমরা এক বছরের ২০-২৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন দিয়েছি। আইপিওর অনুমোদন দিয়েছি।

আমাদের বড় মনের হতে হবে উল্লেখ করে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, অনেকে সমালোচনা করেন যে, অনেক আইপিও অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে, পুঁজিবাজার ওভার ভ্যালুড হচ্ছে, ইনডেক্স বাড়ছে। এতো বড় বাজার হওয়া উচিৎ না। আমরা যদি আশে পাশের দেশের সাথে তুলনা করি তবে দেখতে পাব আমরা কোথায় আছি। তারপরও আমরা মনে করি, এটা বেশি হয়ে গেছে, ওভারলোড হয়ে গেছে। সব কিছুতেই আমরা হীনমন্নতা বোধ করি। এটা ঠিক নয়, আমাদের মনকে বড় করতে হবে। মনকে যদি বড় না করি, দেশের অর্থনীতির বড় হচ্ছে- সেই সঙ্গে পুঁজিবাজারকে যদি এগিয়ে নিতে না পারি, তাহলে তো এই দেশের উন্নতি হবে না।

অর্থসূচক/এমআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.