পেটে কাঁচি রেখে সেলাই: ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের ঝুটিগ্রামের খায়রুল মিয়ার মেয়ে মনিরা খাতুনের (১৮) পেটে কাঁচি রেখে অস্ত্রোপচার করার ঘটনায় ওই তরুণীর পরিবারকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনাটি তদন্তের জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করার জন্য বলা হয়েছে লিগ্যাল নোটিশে।

সংশ্লিষ্টদের প্রতি বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) আইন সালিশ কেন্দ্রের ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শাহিনুজ্জামান ও সৈয়দা নাসরিন এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। লিগ্যাল নোটিশ স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ফরিদপুরের সিভিল সার্জন, ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, সার্জারি ইউনিটের অধ্যাপক ড. রতন কুমার সাহা, রেজিস্ট্রার ডা. সালেহ মো. সৌরভ এবং সার্জারি বিভাগ ইউনিট-২–এর ডা. সরফউদ্দিনকে বিবাদী করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী মো. শাহিনুজ্জামান জানান, ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক তরুণীর অস্ত্রোপচারের পর পেটের মধ্যেই কাঁচি রেখে সেলাই করে দেওয়ার ৬৪৩ দিন পর অপসারণের ঘটনায় ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দায়ীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ এবং তাদের অবহেলার কারণে ভিকটিমকে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য এ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে হাইকোর্টে রিট করা হবে।

জাতীয় দৈনিকে গত ১১ ডিসেম্বরের ‘পেটে কাঁচি রেখেই সেলাই, ৬৪৩ দিন পর অপসারণ’ শীর্ষক প্রতিবেদন সংযুক্ত করে এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। ২০২০ সালের ৩ মার্চ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পেটে টিউমার নিয়ে তিনি ভর্তি হন তরুণী মনিরা খাতুন। সাতদিন পর তার অপারেশন করা হয়। এসময় মনিরার পেটে কাঁচি রেখেই সেলাই করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

গত ১১ ডিসেম্বর বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রতন কুমার সাহা। বিষয়টি নিশ্চিত করে ডা. রতন কুমার বলেন, বিষয়টি বেশ জটিল ছিল। কারণ কাঁচিটি প্রায় দুই বছর ধরে পেটের ভেতরে থাকায় অপারেশন করারও ঝুঁকি ছিল। এরপরও তিন ঘণ্টা চেষ্টা করে কাঁচিটি বের করতে সক্ষম হই।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কাঁচিটি থাকার কারণে তার পেটের নাড়ির কিছু অংশে পচন ধরেছে। পচনগুলো কেটে ফেলতে হয়েছে। এমনও হতে পারে তার কৃত্রিম নাড়ি লাগানো লাগতে পারে। মনিরার এখনো জ্ঞান ফেরেনি। তাই জ্ঞান ফেরা ও সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব নয়।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলিমুজ্জামানের হস্তক্ষেপে গত শুক্রবার রাতে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মনিরাকে ভর্তি করতে বাধ্য হন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.