গায়েবি মামলা: তদন্ত প্রত্যাহার চেয়ে পীর সিন্ডিকেটের আবেদন

খুন, ধর্ষণ ও মানবপাচারের অভিযোগে করা ৪৯ গায়েবি মামলার বাদী খুঁজে বের করতে হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তের পর প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সেই প্রতিবেদন আইনসম্মত হয়নি বলে তা প্রত্যাহার চেয়ে পীর সিন্ডিকেটের আইনজীবীর পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে।

সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে আবেদন করেন পীর সিন্ডিকেট পক্ষের আইনজীবীরা। বিষয়টি নিয়ে আজ হাইকোর্টে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর এ বিষয়ে আরও শুনানি ও আদেশের জন্য আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ বি এম গোলাম মোস্তফা তাজ, অ্যাডভোকেট বেলায়েত হোসেন, অ্যাডভোকেট জুলহাস উদ্দিন আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। আদালতে আজ রিটকারী একরামুল আহসান কাঞ্চনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট এমাদুল হক বশির।

আবেদনের বিষয়ে ব্যারিস্টার এ বি এম গোলাম মোস্তফা তাজ বলেন, আমরা গত ১৪ জুন কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ৪৯ গায়েবি মামলার ঘটনা তদন্ত করতে সিআইডিকে দেওয়া হাইকোর্টের নির্দেশ রিকলের (প্রত্যাহার) আরজি জানিয়েছি। ওই আবেদনে আমরা বলেছি, হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে করা সিআইডির প্রতিবেদন আইনসম্মত হয়নি। তাই সেটি প্রত্যাহার হওয়া দরকার। এছাড়া ভুক্তভোগীরা চাইলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা রকতে পারবে বলে গত ৫ ডিসেম্বর দেওয়া আদেশও প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় দায়ের করা রিটের শুনানিতে গত ৫ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বলেছিলেন, ভুক্তভোগীরা চাইলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন। সেই আদেশও প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।

এর আগে হাইকোর্ট গত ১৪ জুন এক আদেশে একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন এলাকায় করা ৪৯টি মামলার বাদীকে খুঁজে বের করতে সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এছাড়া ওই ৪৯ মামলার বিস্তারিত নিয়ে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এরপর গত সেপ্টেম্বরে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেন সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার রতন কৃষ্ণ নাথ। এ বিষয়ে করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ জুন থানায় বা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা করলে অভিযোগ দায়েরকারীর ন্যাশনাল আইডিকার্ড (এনআইডি) দেওয়া বাধ্যতামূলক বলে আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, ডাকাতিসহ নানা অভিযোগে রাজধানীর শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ‘অস্তিত্বহীন’ বাদীর করা ৪৯ মামলায় প্রতিকার চেয়ে করা রিট শুনানিতে হাইকোর্টের একই ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদেশের পর আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন, যেকোনো মামলা বা অভিযোগ করার ক্ষেত্রে বাদীর জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি লাগবে বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রুল জারি করে ৬০ দিনের ৪৯ মামলার ঘটনা তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আইনজীবী এমাদুল হক বসির বলেন, ঢাকার শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় ৪৯টি মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় তিনি এক হাজার ৪৬৫ দিন (প্রায় আট বছর) জেলে খেটেছেন। কিন্তু একটি মামলারও বাদীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বিবেচনায় তিনি অনেক মামলায় খালাস পেয়েছেন। এর প্রতিকার চেয়ে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন।

রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজিপি, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (এসবি), অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (সিআইডি), মহাপরিচালক র‌্যাব, ঢাকার পুলিশ কমিশনারসহ ৪০ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।

এছাড়া গত ৫ ডিসেম্বর রাজারবাগ দরবারের পীর দিল্লুর রহমানসহ চারজনকে মামলার বিবাদী করার দাবিতে হাইকোর্টে আবেদন করেন ব্যবসায়ী একরামুল আহসান কাঞ্চন। পীর ছাড়া অন্য তিনজন হলেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের গোলম কবিরের ছেলে সাকেরুল কবির, একই জেলার সুধারামের মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে ফারুকুর রহমান এবং কুমিল্লার হোমনার লিয়াকত হোসেন প্রধানের ছেলে মফিজুল ইসলাম। ফলে ওই রিটে এখন বিবাদী হলেন ৪৪ জন। গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদনটি করেন ৪৯টি গায়েবি মামলার শিকার কাঞ্চনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এমাদুল হক বশির।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.