অভিযোগ পেলে ধরা হবে বড় দুর্নীতিবাজদের: দুদক চেয়ারম্যান

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেছেন, ছোট-বড় দুর্নীতি বলতে কিছু নেই। তবে ছোট ছোট দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়, আদালতে সাক্ষী দেওয়া হয়, এর বিপরীতে বড় বড় দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে না; হঠাৎ এলেও আদালতে কেউ সাক্ষ্য দিতে আসে না। বড় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে দুদক অবশ্যই তাদের ধরবে।

আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, গণমাধ্যমের হাত-পা বাঁধা নেই, তারা স্বাধীন; তারা বড় বড় দুর্নীতির খবর প্রকাশ করতে পারে। তাতে দুদকের কাজ করতে সুবিধা হবে, দেশেরও উপকার হবে।

মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, দুর্নীতিবাজ বলতে সাধারণত সরকারি কর্মচারীদের বোঝানো হয়। অথচ সরকারি কর্মচারীদের টেবিলের উল্টো দিকে যারা আছেন, তারাও দুর্নীতিবাজ। বড় বড় টেবিলের উল্টো দিকের লোকেরা দুর্নীতি না করলে কর্মচারীরা এককভাবে দুর্নীতি করতে পারে না।

তিনি বলেন, টেবিলের উল্টো দিকে যারা থাকেন, তাদের কথা বলা হয় না। তাদের প্রতিহত করা হয় না। তারা এসে কর্মচারীদের লোভ দেখায়, প্রভাব বিস্তার করে, ভয় প্রদর্শন করা হয়- এভাবেই একসময় লোভের ফাঁদে পড়ে যায় কর্মচারীরা। তাদের ব্যাপারে কেউ কথা বলে না। প্রকাশ্যে তাদের মুখোশ উন্মোচন হলে দুদক বসে থাকবে না। দুদক তাদের আইনের আওতায় আনবে। তাদের ধরতে হবে। এর জন্য দুদকের অপেক্ষায় থাকার প্রয়োজন নেই। দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের প্রতিহত করতে হবে। তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যা বলা হচ্ছে, কাজে তার প্রতিফলন ঘটলে দুর্নীতি অনেকাংশেই কমে আসবে। দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়, দেশের উন্নয়ন টেকসই হয় না।

তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজরা কখনোই দেশপ্রেমিক হতে পারে না, তাই দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। কারণ, যারা দেশপ্রেমিক নয়, তাদের কাছে রাষ্ট্র-জাতি নিরাপদ নয়। দুর্নীতি প্রতিনিয়ত সামাজিকভাবে নতুন নতুন সংকট, বৈষম্য সৃষ্টি করে। দুদক দুর্নীতি দমনে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে, এ ক্ষেত্রে সরকারও সহায়তা করছে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সভা-সমাবেশে দুর্নীতির বিপক্ষে বলা হয়। সভা-সমাবেশ শেষে মানুষ সে কথা ভুলে যায়। এটা ভোলা যাবে না। আবার দেখা যায়, দুর্নীতির মাধ্যমে যারা বিশাল বিত্তের মালিক হয়েছেন- তাদের কাছাকাছি যেতে, আনুকূল্য পেতে অনেকে এগিয়ে যান। এটি করে দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে আরও প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে। সামাজিকভাবেই এটা বর্জন করা উচিত।

তিনি বলেন, সন্তানের রোলমডেল তার বাবা। বাবা দুর্নীতিগ্রস্ত হলে সন্তান সেটা দেখে বড় হলে সেই সন্তানও একসময় বাবার পথেই হাঁটবে। দুর্নীতি খারাপ কাজ- সেটা সন্তানের মাথায়ই আসবে না। বর্তমান সমাজে সেটাই হচ্ছে। এই অবক্ষয় থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হবে। আর এর জন্যই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামগ্রিক উদ্যোগ দরকার।

দুদক চেয়াম্যান বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতা থাকার পরও দুদক চেষ্টা করে যাচ্ছে। দুদক সবার সহযোগিতা চায়। এই দেশ সবার। দেশে দুর্নীতি থাকলে সমতা, শিষ্টাচার থাকে না। অসমতা, বৈষম্য ও নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাই এগিয়ে না এলে দুদকের প্রতি দেশের মানুষের যে প্রত্যাশা- সেই প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হবে না।

তিনি মনে করেন, দুর্নীতি পৃথিবীর সব দেশেই আছে, তবে এর ব্যাপকতার তারতম্য আছে। বাংলাদেশও দুর্নীতিমুক্ত নয়। দুর্নীতি করলে দেশ ও দেশের মানুষ কী ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হয়- এটা সবাইকে নিজে থেকে বুঝতে হবে। এটা বোঝানোর দায়িত্ব শুধু দুদকের নয়। একটা আইন করে, দুর্নীতি দমন কমিশন করে দুর্নীতি নির্মূল হবে- এটা ভাবা বাস্তবসম্মত নয়। দুদক তার আইন অনুযায়ী সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাবে। তবে এককভাবে নয়, সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্মিলিতভাবে এই কাজে অংশ নিতে হবে।

অর্থসূচক/এমআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.