আসামিদের সাজার কথা শুনে অঝোরে কাঁদলেন আবরারের মা

বহুল আলোচিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বী হত্যা মামলায় দেওয়া আদালতে রায়ে অঝোরে কাঁদলেন আবরারের মা রোকেয়া খাতুন। এ যেন ছেলে হারানোর গত দুই বছর ধরে ধারাবাহিক কান্নার বহিঃপ্রকাশ।

বুধবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

আদালতে সশরীরে উপস্থিত না হলেও কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডের বাসায় তিনি রায় শোনার জন্য অধীর আগ্রহে বসে ছিলেন। টিভিতে আসামিদের সাজার কথা শুনে অঝোরে কেঁদে ওঠেন। বিলাপ করতে করতে রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘আমি ওকে নিজে হাতে বুয়েটে দিয়ে আসছিলাম। আমার শান্ত, ভদ্র ছেলেটা কোথায় চলে গেছে? আমার ছেলে ওদের কী ক্ষতি করেছিল? ওকে হত্যা না করে কেন আমাকে ফেরত দিলো না। ও পড়তো না। তবুও আমার বুকে থাকতো।’

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে আমাকে ছাড়া বাইরে যেত না। আমার ছেলেকে ওরা কেমন করে পিটায়ে মারলো? আমি শুধু দিন যায়, রাত যায় ওর পায়ের দাগগুলো দেখি। যে ছেলেকে আমি একটা আঘাত করিনি। আর সেই ছেলের পায়ে কত পেটানোর দাগ। আমি ছেলের মৃত্যুর পর থেকে আল্লাহর কাছে চেয়েছি, যারা আমার ছেলেকে এত কষ্ট দিয়ে মেরেছে তুমি তাদের বিচার করো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম প্রত্যেক আসামির সবোর্চ্চ শাস্তি ফাঁসি। যে ২০ জনকে আদালত ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন এতে আইনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। সেই সঙ্গে অমীত সাহার ফাঁসি চাই। যেদিন এ রায় কার্যকর হবে সেদিন আমরা ভাববো, আমরা বিচার পেয়েছি।’

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে আবরার ফাহাদকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তাদের বিরুদ্ধে ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। পরে রাত ৩টার দিকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই বছরের ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পরে পুলিশ ২২ জনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে আট জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এদের সবাই বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.