আবরার হত্যা মামলার ২২ আসামি আদালতে

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ২২ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাদের ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় আনা হয়।

রায় ঘোষণার আগে আসামিদের আদালতের এজলাসে হাজির করা হবে। এ মামলার মোট ২৫ আসামির মধ্যে তিনজন শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার ইনর্চাজ, পুলিশের এসআই নিপেন বিশ্বাস বলেন, সকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২২ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।

বুধবার (৮ ডিসেম্বর) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে।

ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া জানিয়েছেন, দুপুর ১২টার দিকে রায় ঘোষণা হতে পারে। রায়ে সব আসামির মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করেছেন তিনি।

এদিকে আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেছেন, ‘ছেলে হত্যার রায় শুনতে সোমবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে ঢাকায় এসেছি। এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছি। রায় শুনতে আগামীকাল (বুধবার) সকালে আদালতে যাবো।’

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে, সবার মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রত্যাশা করছি। এবার যেন আর রায় ঘোষণার তারিখ না পেছানো হয়।’

গত ২৮ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য থাকলেও রায় প্রস্তুত না হওয়ায় বিচারক রায়ের জন্য ৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন।

আগের ধার্য দিনে রায় ঘোষণা না করার বিষয়ে বিচারক বলেন, রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন, তা বিশ্লেষণ করে রায় প্রস্তুত করা এখনো সম্ভব হয়নি। রায় প্রস্তুত করতে আরও সময় লাগবে। তাই এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য ৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হলো।

গত ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান রায় ঘোষণার জন্য ২৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেছিলেন।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। ওই দিনগত রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পরদিন ৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়। নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি।

ওই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান।

অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন ও তদন্তে প্রাপ্ত আরও ছয়জন। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন ও এজাহার-বহির্ভূত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারদের মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আটজন।

গ্রেফতার ২২ জন হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম ও এস এম মাহমুদ সেতু।

মামলার তিন আসামি এখনো পলাতক। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। তাদের মধ্যে প্রথম দুজন এজাহারভুক্ত ও শেষের জন এজাহার-বহির্ভূত আসামি।

২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলায় মোট ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.