৬০ দেশের সিনেমা নিয়ে ইয়ুথ বাংলা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব

ঢাকার উত্তরায় প্রথমবারের মত শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। দেশের সাংস্কৃতিক সংগঠন ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফাউন্ডেশন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বিজয়ের সূবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে এ উৎসবের আয়োজন করেছে।

১০-১৬ ডিসেম্বর সপ্তাহব্যাপী এ উৎসব চলবে ‘Together we all, divided we fall’ – এই স্লোগান নিয়ে উৎসবে দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য নির্মাতাদের ৬০টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।

মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফাউন্ডেশনের প্রধান সীমা হামিদ।

সেখানে আরও জানানো হয়, চলচ্চিত্র উৎসবের ভেন্যু হিসেবে থাকছে ৪৫০ আসনের ইন্টারন্যাশানাল হোপ স্কুল থিয়েটার হল, রোড নং-৬, প্লট নং-৭, গেইট -8 , সেক্টর -৪, উত্তরা, ঢাকা। বাংলাদেশে এই প্রথম ডলৰি সাউন্ড সিস্টেমসহ ২৪ ফুট প্রস্থ ও ১৬ ফুট দৈর্ঘ্যের এলইডি পর্দায় বেলা ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত বিনামূল্যে উৎসবের সকল চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিশিষ্ট সংস্কৃতি অনুরাগী ও ইয়ুথ বাংলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক সীমা হামিদ ও উৎসব পরিচালক চলচ্চিত্রকার জনাব গাজী রাকায়েত ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। চলচ্চিত্র উৎসবের বিস্তারিত বিষয়াদি জানাতে সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দিলারা জামান, শম্পা রেজা, আল মামুন, জনাব, দেওয়ান হাবিব, অভিনয় শিল্পী শর্মিলি আহমেদ, আবৃত্তিকার শিমুল মুস্তফা, সংগীতশিল্পী এস আই টুটুল, চিত্রনায়িকা নিপুন আক্তার, সংস্কৃতিকর্মী ফারজানা রওশন এবং ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফাউন্ডেশনের সভাপতি মুনা চৌধুরী।

সীমা হামিদ বলেন, ‘চলচ্চিত্র উৎসব যেকোনো দেশের চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ভালো ছবি দেখার ব্যাপারে আমাদের সাধারণ মানুষের যথেষ্ট আগ্রহ আছে। ভালো ছবির চাহিদা থাকলেও, ভাল ছবির তেমন যোগান আমাদের নেই। ভালো ছবির যোগান তৈরি করতে হবে। শুধু সস্তা বিনোদনের মাধ্যমে দর্শকের মনোরঞ্জন করাই চলচ্চিত্রের মূল উদ্দেশ্য হতে পারে না।

চলচ্চিত্রের মাধ্যমে গণমানুষের কথা বলা, তাদের সচেতন করে একটি রুচিবান, আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক নতুন প্রজন্ম তৈরি করাই ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য। আর সে লক্ষ্য বাস্তবায়নেই চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন। যেখানে তরুন প্রজন্মের মাঝে চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশ ও প্রসার লাভ করবে এবং চলচ্চিত্রের দর্শকদের শিল্পসম্মত চলচ্চিত্র অবলোকন, অনুধাবন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে অন্তর্নিহিত মানবিক মূল্যবোধসৃষ্টি করবে বলেই আমরা প্রত্যাশা করি।’

উৎসব পরিচালক নির্মাতা গাজী রাকায়েত বলেন, ‘আমাদের এই চলচ্চিত্র উৎসবের একটি প্রধান লক্ষ্য বহির্বিশ্বের সাথে আমাদের নতুন প্রজন্মের নির্মাতাদের যোগসূত্র তৈরি করে দেওয়া। সম্ভাবনাময় তরুণ নির্মাতাদের উৎসাহ দেয়া।’

তিনি জানান, উৎসবে প্রতিযোগিতা বিভাগে সেরা চলচ্চিত্র নির্ধারণে রয়েছেন পাঁচসদস্য একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক জুরিবোর্ড। পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পাশাপাশি থাকছে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরুস্কার। আরো থাকছে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা-অভিনেত্রীর পুরস্কার।

ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফাউন্ডেশনের সভাপতি মুনা চৌধুরী বলেন, ‘মুজিববর্ষ ও মহান বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করে সুখী সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশ জরুরি। ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফাউন্ডেশন বিশ্বাস করে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সব মানবিক অনুভূতি উঠে আসে। একটি ভাল চলচ্চিত্র মানুষ ও সমাজকে বদলে দিতে পারে। মানুষের জন্য সমাজের জন্য কাজ করতেও অনুপ্রাণিত করে। ইয়ুথ বাংলা মানসম্মত, শিল্পসম্মত চলচ্চিত্রের নির্মান, প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখতে চায়। ইয়ুথ বাংলা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব নির্মাতা, প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, কলাকুশলী, চলচ্চিত্র শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গবেষক সকলের সেতুবন্ধন রচনা করে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

অভিনেত্রী দিলারা জামান বলেন, ‘এই আয়োজনকে আমি সাধুবাদ জানাই। এর মাধ্যমে দেশের সিনেমা নিয়ে এ প্রজন্ম আগ্রহী হবে। আরও অনেক ভালো সিনেমা নির্মাণের তৃষ্ণা তৈরি হবে।’

অভিনেত্রী শর্মিলি আহমেদ বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে যে অনেকগুলো মানুষ এসে এক হয়েছেন সিনেমার জন্য। একটা জাতির মানসিক ও সৃষ্টিশীল বিকাশে এসব আয়োজন খুবই ভালো উদ্যোগ।’

অভিনেত্রী নিপুণ বলেন, ‘আমি খুব আনন্দিত এই আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরে৷ আশা করছি সবাই এই উৎসবটি উপভোগ করবেন।’

উৎসবে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, নেপাল, আর্জেন্টিনাসহ আরও অনেক দেশের সিনেমা প্রদর্শিত হবে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.