‘কয়েক মাস ধরে মুরাদের পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি’

কয়েক মাস ধরে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন বলে জানিয়েছেন একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এ কথা জানান।

তিনি বলেন, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ডা. মুরাদ হাসান আমাকে সবসময় সহযোগিতা করে এসেছেন। কয়েক মাস ধরে তার মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি। তার কিছু বক্তব্য ঘটনা আসলে সরকার ও দলকে বিব্রত করেছে।

তিনি আরও বলেন, সেই কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পদত্যাগ করার জন্য বলেছেন। সে অনুযায়ী তার সাইন করা পদত্যাগপত্র একটু আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে নিয়ে গেছে তার পিআরও। তার সবগুলো ঘটনা, পুরো বিষয়টি আসলে দুঃখজনক।

মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিনি আমাকে সবসময় সহযোগিতা করেছেন। সেজন্য তাকে আমি ধন্যবাদ জানাই। তার সুস্থতা ও তার মঙ্গল কামনা করি।

মুরাদ হাসানের মধ্যে আপনি কী পরিবর্তন দেখেছিলেন জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, দেখুন, আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি আগে যে রকম ছিলেন। গত তিন মাস ধরে একটা পরিবর্তন আমার কাছে মনে হচ্ছিল। বিভিন্ন ঘটনা ও কর্মকাণ্ডে আমরা সেটি মনে হচ্ছিল।

দু-একটা পরিবর্তনের কথা যদি বলতেন- এ বিষয়ে তিনি বলেন, তিনি আগে যে রকম ছিলেন সেটা থেকে ভিন্ন মনে হয়েছে আমার। এটা আমার পারসোনাল অবজারভেশন, এটা তো আমি সবিস্তারে বলতে পারবো না। কারণ এটা অনুভবের বিষয় সেটা আমি এখানে সেভাবে প্রকাশ করতে পারবো না।

তার সুস্থতা কামনা করছেন, তিনি কি কোন ধরনের অসুস্থতায় রয়েছেন- এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যেকোনো মানুষের তো সুস্থতা কামনা করা যায়। আপনারও সুস্থতা আমি কামনা করতে পারি, আপনি যাতে অসুস্থ না হন।

ডা. মুরাদ সংসদ সদস্য আছেন, দলেও তার পদ আছে। সেটি কীভাবে দেখছেন- এ বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, তিনি জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক, সেই বিষয়ে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ বলতে পারবে, তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।

‘সংবিধানে আছে কারও নৈতিক স্খলন হলে প্রধানমন্ত্রী যে কাউকে পদত্যাগ করতে বলতে পারেন। দলের বিষয়টি দল বৈঠক করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। তিনি যেহেতু জেলা আওয়ামী লীগের কর্মকর্তা জেলা আওয়ামী লীগ সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এই মুহূর্তে এর বেশি কিছু বলা সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি না।’

কয়েক মাস ধরে পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন, এতদিন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি বেশ কিছু বক্তব্য দিয়েছেন, দলের সঙ্গে পরামর্শ না করেই দিয়েছেন। যেগুলোর কারণে আমাদেরও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

মুরাদ হাসান বলেছেন তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েই বক্তব্য দেন- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে হাছান মাহমুদ বলেন, আমার জানা নেই। আমি জানি না প্রধানমন্ত্রীকে এ সমস্ত কথা বলেছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবেও কাজ করেছি। দল বিব্রত হয়, সরকার বিব্রত হয় এই ধরনের কথা ও কর্মকাণ্ড প্রধানমন্ত্রী কখনও কারো জন্য অ্যালাউ করেন না।

সম্প্রতি তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান এবং তার মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে একটি অনলাইন সাক্ষাৎকারে অসৌজন্যমূলক কথা বলেন। এরপরই প্রতিমন্ত্রী মুরাদের একটি কথোপকথন ফাঁস হয়, যেখানে তিনি অশ্লীল ভাষায় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে কথা বলেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মহলে ডা. মুরাদের শাস্তির দাবি ওঠে।

এরপর সোমবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ডা. মুরাদ হাসানের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে এবং তিনি তাকে আগামীকালের মধ্যে পদত্যাগ করতে বলেছেন। আমি আজ রাত ৮টায় তাকে বার্তাটি পৌঁছে দিই।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.