মেসির হাতে সপ্তম ব্যালন ডি’অর

লিওনেল মেসি না রবার্ট লেভানদভস্কি। কার হাতে উঠবে এবারের ব্যালন ডি’অর? বেশ কিছু দিন থেকেই এ প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল ফুটবল পাড়ায়। শেষ পর্যন্ত সব গুঞ্জন থামিয়ে ফুটবলের চরম আরাধ্যের এ পুরস্কারটি এবারও জিতে নিয়েছেন মেসি। ২০২১ সালের ব্যালন ডি’অর উঠল আর্জেন্টাইন অধিনায়কের হাতে।

মঙ্গলবার রাতে প্যারিসের থিয়েটার ডু চ্যাটেলেটে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে নিজের রেকর্ড আরও সমৃদ্ধ করে সপ্তমবারের মতো এ পুরষ্কার হাতে তুলে নেন মেসি। ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো এ পুরষ্কার জিতেছিলেন তিনি। এরপর ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫ ও ২০১৯ সালের পর আবার জিতলেন চলতি মৌসুমে বার্সা থেকে পিএসজিতে যোগ দেওয়া এ মহাতারকা।

এবারের ব্যালন জেতার পর মেসি নিজ দেশকে এনে দিয়েছিলেন কোপা আমেরিকা শিরোপা। যেখানে সর্বোচ্চ গোল (৪), সর্বোচ্চ এসিস্ট (৫), সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছিলেন মেসিই। এছাড়া বার্সেলোনার হয়ে লা লিগায় সর্বোচ্চ গোল এবং কোপা দেল রে শিরোপাও জিতেছিলেন তিনি।

মেয়েদের বিভাগে ব্যালন ডি’অর ফেমিনি উঠেছে বার্সেলোনার স্প্যানিশ তারকা আলেক্সিয়া পুতেয়াসের হাতে। ব্যালন ডি’অর না পেলেও বছরের সেরা স্ট্রাইকারের পুরস্কার পেয়েছেন লেভানদভস্কি। সেরা উদীয়মান তারকা হিসেবে কোপা ট্রফি জিতে নিয়েছেন বার্সেলোনা মিডফিল্ডার পেদ্রি। সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার ইয়াসিন ট্রফি জিতেছেন পিএসজির ইতালিয়ান গোলরক্ষক জুয়ানলুইজি দোনারুমা। আর বছরের সেরা ক্লাব নির্বাচিত হয়েছে ইংলিশ ক্লাব চেলসি।

গুঞ্জনটা অবশ্য আগে থেকেই ভেসে বেড়াচ্ছিল ফুটবল মহলে। সামাজিক মাধ্যমে ফাঁস হওয়া একটি তালিকাও ভাইরাল হয়। সেখানে বিজয়ীর নাম ছিল মেসিরই। যদিও পরবর্তীতে ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিনের সম্পাদক জানিয়েছেন সে গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তখন পর্যন্ত ব্যালন ডি’অর বিজয়ী হিসেবে কাউকে বেছে নেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।

ক্লাবের হয়ে অবশ্য গত মৌসুমে বড় কোনো ট্রফি জিততে পারেননি মেসি। জিতেছেন কেবল কোপা দেল রে। তবে পুরো মৌসুম জুড়ে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে বার্সেলোনাকে কক্ষপথে রেখেছিলেন তিনিই। জাতীয় দলে ছিলেন আরও উজ্জ্বল। সবচেয়ে বড় ব্যাপার আর্জেন্টিনার জার্সিতে কোপা আমেরিকার শিরোপা জয়। ১৯৯৩ সালের পর আর্জেন্টিনাকে মর্যাদার কোনো শিরোপা এনে দেওয়ার মূল কারিগরই আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং কোপা আমেরিকার সর্বোচ্চ গোলদাতাও হয়েছেন তিনি। গত মৌসুমে মোট গোল করেছেন ৪৭টি।

অন্যদিকে বুন্ডেসলিগায় গত মৌসুমটা দারুণ কাটিয়েছেন লেভানদভস্কি। মাত্র ২৯ ম্যাচে করেছেন ৪১ গোল করে কিংবদন্তি জার্ড মুলারের ৪০ গোলের রেকর্ড ভেঙে অনন্য উচ্চতায় উঠেছেন এ পোলিশ তারকা। জিতেছেন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আশানুরূপ ফলাফল করতে পারেনি দলটি। এমনকি জাতীয় দলের হয়েও পারফরম্যান্স সে অর্থে ভালো ছিল না। তাতেই পিছিয়ে পড়েন তিনি।

তৃতীয় হয়েছেন জর্জিনহো। ব্যক্তিগতভাবে খুব আহামরি কিছু করতে না পারলেও গত বছর চেলসির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পর ইতালির হয়ে ২০২০ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা জিতে তালিকায় জোরেশোরেই ছিলেন তিনি। ফেভারিট হিসেবে দৌড়ে ছিলেন করিম বেনজিমাও। দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফিরে ফ্রান্সকে নেশন্স লিগ জিতিয়েছেন তিনি।

ফুটবলের অন্যতম মর্যাদার এ পুরস্কার প্রতি বছর দিয়ে থাকে ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিন। তবে করোনাভাইরাস মহামারিতে ফুটবল ঠিকঠাকভাবে মাঠে না গড়ানোয় ২০২০ সালে এ পুরস্কারটি দেয়া হয়নি। এর আগে ২০১৯ সালে সবশেষ এ পুরষ্কার জিতেছিলেন মেসি। মাঝে ২০১৮ সালে লুকা মদ্রিচ ছাড়া গত এক যুগে এ পুরষ্কার পেয়েছেন মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো।

১৯৫৬ সাল থেকে প্রতি বছর সেরা খেলোয়াড়কে ব্যালন ডি’অর পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রথমদিকে শুধু ইউরোপিয়ান খেলোয়াড়দেরই দেয়া হতো এ পুরস্কার। ১৯৯৬ সাল থেকে ইউরোপের ক্লাবে খেলা ফুটবলারদের আওতায় আনা হয়। আর ২০০৭ সাল থেকে এ পুরস্কারটা উন্মুক্ত করে দেয়া হয় গোটা বিশ্বের জন্য।

১৮০ জন সাংবাদিকের ভোটে প্রথমে ৩০ জন শীর্ষ ফুটবলারের তালিকা প্রকাশ হয়। এরপর সে তালিকা থেকে ৫০ জন বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক নির্বাচন করবেন শীর্ষ পাঁচ খেলোয়াড়কে। প্রত্যেকের দেওয়া ভোটের ক্রমানুসারে পয়েন্ট গণনা করা হয়। তালিকার প্রথমে রাখা খেলোয়াড় পান ছয় পয়েন্ট। তবে দ্বিতীয় স্থানে থাকা খেলোয়াড় পান চার পয়েন্ট। এভাবে ক্রমানুসারে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ফুটবলার পান যথাক্রমে তিন, দুই ও এক পয়েন্ট। সবশেষে মোট পয়েন্টের হিসেবে যিনি প্রথম হন, তার হাতেই ওঠে ব্যালন ডি’অর।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.