‘পুঁজিবাজারের তিন ইস্যু নিয়ে বৈঠকে বসছে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা’

পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে বৈঠকে বসছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আগামী মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) এই বৈঠ অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ (Bank Exposure) ও ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত বিষয়সহ নানা বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।

বিএসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

উল্লেখ, হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো আকষ্মিকভাবে মিলিয়ে গেছে পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক গতিশীলতা। মূল্যসূচকের পাশাপাশি কমছে লেনদেনের পরিমাণ। গত কিছুদিন ধরেই বাজারে কিছুটা অস্থিরতা চলছে। চলতি সপ্তাহে অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। এই সপ্তাহে প্রতিটি কার্যদিবসেই দরপতন হয়েছে বাজারে। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) সপ্তাহের শেষ দিনে লেনদেনের পরিমাণ হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে।

বাজারের সাম্প্রতিক অস্থিরতার জন্য কয়েকটি ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মতভিন্নতাকে দায়ী করছেন বিনিয়োগকারী ও স্টেকহোল্ডাররা। এ অবস্থায় ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করে একটি সমঝোতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকই আলোচিত বৈঠক আহ্বান করেছে।

বেশ কিছুদিন ধরেই পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ (Bank Exposure) ও ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণাসহ কিছু বিষয়ে মতভিন্নতা চলছে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে। পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে বিএসইসি পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল গঠন করেছে। তালিকাভুক্ত সব কোম্পানিকে তাদের অবন্টিত লভ্যাংশ এই তহবিলে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবণ্টিত লভ্যাংশের অর্থ স্থানান্তরে বাগড়া বসিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের বক্তব্য, এতে আমানতকারীদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের হিসাবায়ন হচ্ছে শেয়ারের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে।  বাজার একটু গতিশীল হলে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে যায়। তাতে অনেক ব্যাংকের কথিত বিনিয়োগের পরিমাণ আইনে নির্ধারিত সীমার বাইরে চলে যায়। তখন সংশ্লিষ্ট ব্যাংক তার কাছে থেকে থাকা শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ সমন্বয় করে। এতে বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে গেলে দরপতন শুরু হয়।

বিএসইসিসহ বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারের ক্রয়-মূল্যের ভিত্তিতে তাদের বিনিয়োগের হিসাব করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তাদের যুক্তি, একটি ব্যাংক যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে, সে পরিমাণ ঝুঁকি থাকে। শেয়ারের দাম বাড়লে বাস্তবে তার কোনো ঝুঁকি বাড়ে না। উল্টো এই ঝুঁকি কমে আসে। কিন্তু এই যুক্তিকে কানে নিচ্ছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণার ইস্যু নিয়েও মতভিন্নতা রয়েছে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে। বিদ্যমান সিকিউরিটিজ আইন অনুসারে, একটি কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করলে একইসাথে বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) তারিখ ও রেকর্ড তারিখ জানাতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শ, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) ঘোষিত লভ্যাংশ অনুমোদিত হলেই রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।

এছাড়া সম্প্রতি আইসিবির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে ৫শ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের ঘটনায় সোনালী ব্যাংককে জরিমানা করাসহ কয়েকটি ব্যাংককে জরিমানা করায় বাজারে তার তীব্র প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করাসহ পুঁজিবাজারের উন্নয়নের নানা দিক নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার বৈঠক হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শাসুদ্দিন আহমেদ অর্থসূচককে বলেন, পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক অবস্থাসহ কিছু ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক আহ্বান করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমরা এই বৈঠকে অংশ নিয়ে ওই ইস্যুগুলোর সমাধানের উপায় খুঁজবো। আমরা বৈঠকে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ (Bank Exposure) ও ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণার ইস্যুকে প্রাধান্য দেব।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম অর্থসূচককে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ধরে রাখা ও এই বাজারের উন্নয়নে সব সময় আন্তরিক। এর প্রেক্ষিতে সমসাময়িক কিছু ইস্যু নিয়ে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার বৈঠক আয়োন করা হয়েছে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.