গোলশূন্য ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মহারণ

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রতে শেষ করেছে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের সুপার ক্লাসিকো। আগেই বিশ্বকাপ নিশ্চিত করা ব্রাজিল ১৩ ম্যাচে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই থাকলো। সমান ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে কাতারের পথে আরেকটু এগিয়ে গেলো আর্জেন্টিনা। সমীকরণ ছিল এমন, আর্জেন্টিনা জিতে গেলে এবং বাকি ম্যাচগুলোর ফল পক্ষে এলে আজই পেয়ে যেতো ২০২২ বিশ্বকাপের টিকিট। কিন্তু লিওনেল মেসিরা নিজেদের কাজটাই তো ঠিকঠাক করতে পারলো না! ঘরের মাঠেও ব্রাজিলের সঙ্গে জিততে পারেনি তারা।

বুধবার (১৭ নভেম্বর) ভোরে সান হুয়ানের এস্তাদিও দেল বিসেন্তেনারিয়োয় সুন্দর ফুটবলের চেয়ে শারীরিক ফুটবলের প্রদর্শনীই বেশি হলো। লাতিন দুই শক্তির লড়াই চোখ জুড়ানোর চেয়ে কাঁটা হয়েই বেশি খোঁচালো। আক্রমণে বিবর্ণতার বিপরীতে জমাট রক্ষণে গোল না খাওয়ার মানসিকতায় সুন্দর ফুটবলের ফুল ফুটতে দেয়নি কোনও দলই। যে কয়েকটি আক্রমণ হয়েছে, তার বেশিরভাগই দুর্বল ফিনিশিংয়ে পূর্ণতা পায়নি। আর ফুটবলের চেয়ে ফাউলের খেলাতেই বেশি মেতে ছিল ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। দুই দল মিলে করেছে ৪২ ফাউল! সমান ২১টি করে!

সুপার ক্লাসিকো। শুধু কি লাতিন আমেরিকা, গোটা ফুটবল বিশ্বের কাছেই এই দ্বৈরথের গুরুত্ব অন্যরকম। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার লড়াই তো আর সবসময় আসে না। ঐতিহ্যগত ভাবে লাতিন দুই দেশের লড়াই উত্তেজনা-রোমাঞ্চের চাদরে মোড়ানো থাকে। আর সেই মহারণ যখন বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মতো মঞ্চে, তখন আরও যেন উপ্তাপের ঢেউ তোলে ফুটবলপ্রেমীদের মনে। সেখানে খেলোয়াড়রা বাকবিতণ্ডায় জড়াবেন না, ধাক্কাধাক্কি হবে না, তা কী হয়! আর এ কারণেই হয়তো সুপার ক্লাসিকোর পূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ হলো না। গোলহীন ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ ছাড়লো দুই দল।

এস্তাদিও দেল বিসেন্তেনারিয়োয় শুরু থেকেই ছিল লড়াইয়ের উত্তাপ। ব্রাজিলের শুরুটা মন্থর হলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ধারালো হয়ে ওঠে তাদের পারফরম্যান্স। বিপরীতে আর্জেন্টিনা পায়ে বেশি বল রাখলেও প্রথমার্ধে সুযোগ তৈরির বিবেচনায় পরীক্ষা তাদেরই বেশি দিতে হয়েছে। প্রতিআক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলা ব্রাজিল মাঝেমধ্যেই ভয় ছড়িয়েছে আর্জেন্টিনার রক্ষণে।

শুরু থেকে ছিল আর্জেন্টিনার আধিপত্য। তবে প্রথম সুযোগটা তৈরি করে ব্রাজিল। ১৫তম মিনিটে মাঝমাঠে আর্জেন্টিনার এক খেলোয়াড়ের ভুল পাসে বল পেয়ে গিয়েছিলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। যদিও ক্রিস্তিয়ান রোমেরোর কড়া রক্ষণে সুবিধা করতে পারেননি রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড। তবে মিনিট দুয়েক পর ভিনিসিয়ুস নষ্ট করেছেন প্রথমার্ধের সবচেয়ে ভালো সুযোগ। ফাঁকা রক্ষণে ও গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেস অনেকটা এগিয়ে থাকার পরও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি বল। প্রতিআক্রমণে লুকাস পাকিতার চমৎকার পাস থেকে একেবারে ফাঁকায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন এই তরুণ উইঙ্গার। সামনে ছিলেন কেবল এমিলিয়ানো। চিপ শটে গোলমুখে বল ঠেলে দিলেও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ভিনিসিয়ুস।

১৯তম মিনিটে আবারও আর্জেন্টিনার সমর্থকদের বুকে কাঁপুনি তুলেছিল ব্রাজিল। এবার মাঝমাঝ থেকে আচমকা গোল লক্ষ্য করে শট করেছিলেন মাথিয়াস কুনহা। এমিলিয়ানো গোললাইন থেকে অনেকটা এগিয়ে ছিলেন। সেটা বুঝতে পেরে শট নেন আতলেতিকো মাদ্রিদ স্ট্রাইকার। যদিও বল যায় বারের ওপর দিয়ে।

ব্রাজিলের এইসব সুযোগের মাঝে অনেকবারই বল নিয়ে এগিয়েছেন মেসিরা। কিন্তু অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে আটকা পড়েছেন। ২৪ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু আর্জেন্টিনা অধিনায়কের শট এক খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে প্রতিহত হয়। আর্জেন্টিনা প্রথমার্ধের সবচেয়ে ভালো সুযোগটা পায় ৪১তম মিনিটে। মার্কোস আকুনার কাছ থেকে বল পেয়ে বক্সের ঠিক বাইরে থেকে রোদ্রিগো দে পল নিচু শট করেছিলেন গোলমুখে। কিন্তু ব্রাজিল গোলকিপার আলিসন ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দিলে গোল পাওয়া হয়নি আর্জেন্টিনার।

বিরতির পরও খেলা গড়িয়েছে একইভাবে। তবে এই অর্ধে সুযোগ তৈরি হয়েছে বেশি। কখনও নিজেদের ভুলে, কখনও আবার গোলকিপার দেয়াল হয়ে দাঁড়ানোয় গোল পাওয়া হয়নি। ভিনিসিয়ুস নষ্ট করেছেন বেশ কয়েকটি সুযোগ। রিয়াল তারকার মাটি কামড়ানো শট এমিলিয়ানো দারুণ দক্ষতায় প্রতিহত করেন। কুনহার শটও লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। ব্রাজিলের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল আবার বারপোস্টও। ফ্রেদের শট বারের ওপরের দিকে লেগে বেরিয়ে যায়। শেষ বাঁশি বাজার আগ পর্যন্ত ফিনিশিংয়ের এই দুর্বলতায় ভুগতে হয়েছে নেইমারবিহীন ব্রাজিলকে।

শেষ দিকে মেসি বক্সের ঠিক বাইরে থেকে জোরালো শটে একটা সম্ভাবনা তৈরি করলেও আলিসনের বিশ্বস্ত হাত ফাঁকি দিতে পারেননি। ফলে বল পজেশনে এগিয়ে থেকেও ঘরের মাঠে পয়েন্ট হারিয়েছে আর্জেন্টিনা।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.