এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায়ও জালিয়াতি

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে চাকরির নিয়োগে প্রশ্নফাঁসের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষাতেও জালিয়াতির ঘটনা বেরিয়ে আসছে। এতে সংশ্লিষ্টতা মিলেছে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের। জালিয়াতিতে সহযোগিতার জন্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই যুগ্ম পরিচালককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

আজ (১৩ নভেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘জালিয়াতিতে সহায়তার তথ্য পাওয়ায় তদন্ত করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আরও তদন্ত চলছে। এরপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’

বরখাস্ত হওয়া দুই কর্মকর্তা হলেন যুগ্ম পরিচালক মো. আলমাছ আলী ও আবদুল্লাহ আল মাবুদ। এর মধ্যে আলমাছ আলী বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগে কর্মরত ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, পরীক্ষায় আসন কোথায় পড়বে এবং ভাইভা বোর্ডে কারা থাকবেন, সেটি চক্রকে জানাতেন আলমাছ আলী। তিনি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ মৌখিক পরীক্ষায় তদবিরও করতেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সিসিটিভি অপারেটর পদে নিয়োগের জালিয়াতির সহযোগিতা ও পরিকল্পনার জন্য তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ঘটনায় একটি তদন্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিসিটিভি অপারেটর পদের ২৬টি শূন্য পদের জন্য ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২০২০ সালের ২৭ মার্চ এই পদের জন্য লিখিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হলেও করোনার কারণে পরীক্ষা স্থগিত হয়। এরপর গত বছরের ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুল অ্যান্ড কলেজে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৭০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে অংশ নেন ১৪২ জন। উত্তীর্ণ হয় ২১ শতাংশ।

উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয় চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের তথ্য যাচাইকালে আবু বকর সিদ্দিক নামে একজন পরীক্ষার্থীর হাতে লেখার গরমিল ধরা পড়ে। তার লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র ও নিজের হাতের লেখার মধ্যে মিল পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আবু বকর সিদ্দিক স্বীকার করেন, তার পক্ষে অন্য কেউ পরীক্ষা দিয়েছেন।

এরপর ১৩ জানুয়ারি বিশেষ তদন্তের নির্দেশ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।

তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে, আবু বকর সিদ্দিকের পরিবর্তে নেত্তানন্দ পাল নামে একজন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষায় এমন অনিয়মের পরিকল্পনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাবুদ। আর আবু বকর সিদ্দিক ও আবদুল্লাহ আল মাবুদের সঙ্গে নেত্তানন্দ পালের যোগাযোগ করিয়ে দেন অপর যুগ্ম পরিচালক মো. আলমাছ আলী। এ জন্য আলমাছ আলীর হিসাবে দুই লাখ টাকা জমা দেন আবু বকর সিদ্দিক।

নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের সত্যতা পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাবুদ ও মো. আলমাছ আলীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ জুন দুই যুগ্ম পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাবুদ ও মো. আলমাছ আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে।
অর্থসূচক/এম এস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.