বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে তিন গুণ

সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ব্যবসা-বাণিজ্য আবার সচল হচ্ছে। ফলে আমদানিতে জোয়ার বইছে। এতে বেড়েছে আমদানি ব্যয়। তবে সে অনুযায়ী রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়েনি। এতে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে তিনগুণ।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথম তিন মাসে (জুলাই-আগস্ট) ৬৫০ কোটি ৩০ লাখ ডলার বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। ডলারের বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী, ঘাটতির এ পরিমাণ প্রায় ৫৬ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় তিনগুণ বেশি।

২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল মাত্র ২০৪ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, আমদানি ব্যয় বাড়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। এতে এখনই দুঃশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। কেননা তুলনামূলক কম হলেও একই সময়ে রফতানি আয় বাড়ছে। বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক শিল্পের মূল বাজার ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনাকালীন সময়ে পণ্য রফতানি কমলেও বর্তমানে এসব দেশে পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। ফলে করোনার ধকল কাটিয়ে দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তারা আবার উৎপাদন শুরু করেছেন। ফলে মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি অনেক বেশি পরিমাণে বেড়েছে। তবে করোনার মধ্যে বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স বাড়লেও বর্তমানে তা অনেক কমে গেছে। যা বাণিজ্য ঘাটতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রেখেছে।

বাণিজ্য ঘাটতি বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, রফতানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় অনেক বেশি হওয়ার কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। করোনার কারণে বিশ্ব বাজারে পণ্যের চাহিদা অনেক কমে গেছে। আমদানি ব্যয় করোনার শুরুতে কমলেও এখন তা আবার বেড়ে গেছে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। তবে এতে দুশ্চিন্তার এখনই কোন কারণ নেই। কেননা আমদানির পাশাপাশি রফতানি আয়ও বাড়ছে। যদিও এসময় রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। এ বিষয়ে আরো বেশি মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে এক হাজার ৮১ কোটি ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে এক হাজার ৭৩২ কোটি ডলার। এ সময়ে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ তার আগের বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি আয় করেছে। বিপরীতে পণ্য আমদানির ব্যয় আগের বছরের চেয়ে ৪৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের এই তিন মাসে ১ হাজার ১৭৫ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৫৮০ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। গত বছরের এই তিন মাসে এসেছিল ৬৭৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এসময় রেমিট্যান্স কমেছে ১৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

এসময় সেবা খাতের ঘাটতি ৬৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ৫৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাণ করা হয়।

আমদানি বাড়ায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) বড় ঘাটতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৩১ কোটি ৪০ লাখ (২.৩১ বিলিয়ন) ডলার। অথচ গত বছরের একই সময়ে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ৩৪৮ কোটি ১০ লাখ (৩.৪৮ বিলিয়ন) ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল। নিয়মিত আমদানি-রফতানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।

সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যেও ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮১ কোটি ডলার। অথচ গত বছরের এই তিন মাসে উদ্বৃত্ত ছিল ৩১০ কোটি (৩.১০ বিলিয়ন) ডলারের মতো।

আর্থিক হিসাবে এখনও উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। জুলাই-সেপ্টেম্বরে এই উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১৯২ কোটি ৫০ লাখ (১.৯২ বিলিয়ন) ডলার। গত বছরের এই সময়ে ৫১ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল।

অর্থসূচক/মৃত্তিকা সাহা/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.