রমনায় বোমা হামলার মামলা হাইকোর্টের কার্যতালিকায়

রমনার বটমূলে ছায়ানটের বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটি দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর হাইকোর্টে শুনানির জন্য আবারও কার্যতালিকায় এসেছে।

মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, আপিল আবেদনটি হাইকোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানির তালিকায় রয়েছে। আজ বিকেল ৪টা থেকে ৪টা ১৫ মিনিট শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগেও মামলাটি একাধিকবার কার্যতালিকায় আসলেও শুনানি হয়নি। আজ আবার তালিকায় উঠল। সর্বশেষ ২৪ জুন এবং তার আগে ১৪ মার্চ কজলিস্টে এসেছিল। ওইদিন সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এ মামলার শুনানির জন্য আমরা প্রস্তুত। আদালত শুনানি শুরু করার নির্দেশ দিলে আমরা এই আপিলের শুনানি করবো। আশা করছি, এবার শুনানি শুরু হলে দ্রুতই মামলাটি শেষ হবে।

এ মামলাটির ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসার পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক তৈরি করা হয়েছিল। শুনানিও শুরু হয়। কিন্তু কয়েক দফা আদালত পরিবর্তন হওয়ায় গত সাত বছরেও শেষ হয়নি আপিল আবেদনটি।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয়। এরপর ওই বছরের ১৪ মার্চ চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিনও ধার্য হয়। কিন্তু তারপর আর এগোয়নি।

পরে আদালত মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন। এরপর সেটি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে যায়। সেখানে দীর্ঘদিন থাকার পরও মামলাটি শুনানির জন্য ওঠেনি। পরে ওই আদালতের বিচারক রদবদল হওয়ায় মামলাটি আর শুনানিও হয়নি। এক সময় মামলাটির আপিল শুনানি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর্যায়ে গেলেও আদালতের এখতিয়ার পরিবর্তন হওয়ায় মামলাটি শেষ পর্যন্ত শুনানি সম্পন্ন হয়নি। এরপর কয়েক দফা আদালত পরিবর্তন হয়ে মামলাটির আপিল শুনানি ঝুলে ছিল। এখন আবার তালিকায় উঠল।

২০১৪ সালের ২৩ জুন বহুল আলোচিত রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমিন। রায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, বিএনপি নেতা ও সাবেক উপ-মন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ আটজনের ফাঁসি ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়। অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামিরা।

মুফতি হান্নান ছাড়াও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন- মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা আকবর হোসেন, মুফতি আব্দুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মাওলানা আরিফ হাসান সুমন। এর মধ্যে মুফতি আবদুল হান্নানের পৃথক একটি মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- হাফেজ মওলানা আবু তাহের, মওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, হাফেজ মওলানা ইয়াহিয়া, মওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মওলানা আব্দুর রউফ ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল।

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হন ও অনেকে আহত হন। এ ঘটনায় থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে সিআইডি হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে দীর্ঘ শুনানি নিয়ে হত্যা মামলাটি বিচারিক আদালতে রায় ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হয়।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.