‘চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্থানীয় বাজারের সক্ষমতা বাড়াতে হবে’

এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্থানীয় বাজারের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এছাড়া পণ্য বহুমুখীকরণ, মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন, কর নীতিমালার সংষ্কার ও সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন, সম্ভাবনাময় রপ্তানিমুখী খাতে তৈরি পোশাকের ন্যায় বন্ডেড সুবিধা দেয়া, তথ্য-প্রযুক্তি বিনিময়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে নেগোশিয়েশনের দক্ষতা উন্নয়ন এবং গবেষণা কার্যক্রমে বরাদ্দ ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) যৌথভাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলনের ৩য় দিনে আজ বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) ‘এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণ ও প্রস্তুতি’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং ইষ্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন ও অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।

প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারাবাহিকতার পাশাপাশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যকার সুসম্পর্কের উন্নয়নে জোরারোপ করেন এবং বিশেষ করে দেশের বেসরকারি খাতের সৃজনশীলতা আরো বেশি হারে কাজে লাগাতে সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। মুখ্য সচিব বলেন, দেশের বেসরকারি খাতের উপর সরকারের আস্থা ও বিশ্বাস দুটোই অত্যন্ত বেশি এবং বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় স্বল্প সময়ে আমরা বিদ্যুৎ খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছি, যার সুফল দেশের জনগন ভোগ করছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আজকের এ আলোচনার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত হবে, যার মাধ্যমে তা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হবে।

সম্মানিত অতিথি’র বক্তব্যে অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের বেতন-ভাতায় প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হচ্ছে, যা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার দৈন্যতা ও দক্ষ মানবসম্পদের অভাবকেই ফুটিয়ে তুলছে, এমতাবস্থায় আমাদেরকে অবশ্যই মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করার প্রতি মনোযোগী হতে হবে।

মঞ্জুর এলাহী জানান, চামড়া ও পাদুকাখাতে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ ৯০-এর দশকে একই সঙ্গে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে ভিয়েতনাম প্রায় ১৬-১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ফুটওয়্যার পণ্য রপ্তানি করে, বিপরীতে আমরা মাত্র ১ বিলিয়ন ডলারের ফুটওয়্যার পণ্য রপ্তানি করছি এবং শুধুমাত্র যৌথ বিনিয়োগ ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই ভিয়েতনাম তা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও চামড়া ও ফুটওয়্যার খাতের উন্নয়ন ও যৌথ বিনিয়োগ আকর্ষণে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ করার জন্য সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি দেশের বিদ্যমান কর কাঠামোর আধুনিকায়ন ও সংষ্কারের উপর জোরারোপ করেন।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, এলডিসি হতে উত্তরণের পর বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হবে, যা কিনা আমাদের রপ্তানিকে ব্যাহত করতে পারে, এমতাবস্থায় তিনি পণ্য উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ়করণ, স্থানীয় বাজারের সম্প্রসারণ এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক নীতিমালার সংষ্কার প্রভৃতি বিষয়ের উপর আরো বেশি হারে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। তিনি বলেন, এলডিসি তালিকা হতে বাংলাদেশের উত্তরণ পরর্বতীতে আমাদের রপ্তানি ধরে রাখতে হলে স্থানীয় বাজার সক্ষমতা বৃদ্ধি, পণ্য বহুমুখীকরণ, মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন, সহায়ক নীতিমালা সংষ্কার এবং তথ্য-প্রযুক্তি বিনিময় একান্ত অপরিহার্য।

ওয়েবিনারে নির্ধারিত আলোচনায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-এর বোর্ড সদস্য তৌফিকুর রহমান, বিল্ড’র চেয়ারপার্সন ও ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি আবুল কাসেম খান, ইউএন টেকনোলোজি ব্যাংক ফর এলডিসি কান্ট্রিজ-এর পোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট অফিসার ইয়াসিম বাকেল এবং বাংলাদেশ ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশনের প্রাক্তন সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান অংশ নেন।

অর্থসূচক/এমএস/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.