হোটেলে মিলল ঢাবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আবাসিক হোটেল থেকে আদনান সাকিব (২৫) নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।

বুধবার (২৭ অক্টোবর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঢাবি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। রুম থেকে পুলিশ একটি সুইসাইডাল নোট উদ্ধার করেছে। সেখানে আদনান তার মৃত্যুর জন্য কারো দোষ নেই বলে লিখে গেছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহবাগ থানা পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড এ কে এম গোলাম রব্বানী। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও মৃত আদনানের সহপাঠীদের সূত্রে জানা যায়, আদনান সাকিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি থাকতেন শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে বর্ধিত ভবনের ৩০০৫ নম্বর রুমে। তার বাড়ি নীলফামারীতে।

আদনানের ব্যাপারে শাহবাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদার বলেন, গত (২৬ অক্টোবর) মঙ্গলবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন আদনান। বুধবার সন্ধ্যায় তার স্ত্রী শাহবাগ থানায় একটি জিডি করে যান। এরপর আদনানের মোবাইল নম্বর ট্রেকিং করলে সেগুনবাগিচার কর্ণফুলী আবাসিক হোটেলে অবস্থান নিশ্চিত হয়। রাত দেড়টায় হোটেলে গিয়ে রেজিস্ট্রেশনে তার নাম দেখা যায়। হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা দিতে হোটেলে উঠেছেন বলে জানিয়েছিলেন। তখন হোটেলটির দ্বিতীয় তলায় ১০৭ নম্বর রুমে গিয়ে তাকে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যায়নি। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। একপর্যায়ে রুমের দরজা ভাঙা হয়। ভেতরে গিয়ে দেখা যায় ফ্যানের সঙ্গে নাইলনের রশি পেচিয়ে গলায় ফাঁসি লাগিয়ে ঝুলছেন আদনান। তখন সেখান থেকে মরদেহ নামিয়ে মর্গে পাঠানো হয়।

সহপাঠীদের বরাত দিয়ে ওসি আরও জানান, সাকিব দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছিল। সবকিছুই ভুলে যেতেন তিনি। এসব কারণে তিনি হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। গত পরশু সন্ধ্যার পর থেকে পরিবার তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে পারছিল না। ফোনে কল হলেও রিসিভ করছিলেন না তিনি। এজন্য গতকাল বুধবার রাতে থানায় জিডি করেন তারা। তার থেকে আমরা একটি চিরকুট পেয়েছি, যেখানে তার জীবনের হতাশার কথা তুলে ধরা আছে। তিনি লিখেছেল, ‘আমি আর নিতে পারছি না। আমি হতাশ। তবে আমার স্ত্রী ভালো মানুষ। তার কোনো দোষ নেই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘রাত দুটার দিকে আমাদের কাছে এই বেদনাদায়ক খবরটি আসে। তখন দুজন হাউজ টিউটরসহ মোবাইল টিমের দুজন দিয়ে কর্ণফুলী হোটেলের ১০৭ নম্বর রুম থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে। সে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ৩০০৫ নম্বর রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিল। ঘটনার পরে আমরা জানতে পারি সে বিবাহিত ছিল। দুদিন ধরে তাকে ফোনে না পেয়ে তার স্ত্রী থানায় জিডি করে। এরই সূত্র ধরে পুলিশ তাকে সেগুনবাগিচায় কর্ণফুলী হোটেল থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এরকম বেদনাদায়ক ঘটনার খবরগুলো আমাদের কাছে সংঘটিত হওয়ার আগে পৌঁছায় না, ঘটনা ঘটে গেলে আমরা তথ্য পাই।’

পুলিশ সূত্র থেকে জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে এটা আত্মহত্যা মনে হলেও বিস্তারিত তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.