খুলে দেওয়া হলো পায়রা সেতু

প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর খুলে দেওয়া হলো বহুল প্রতীক্ষিত পায়রা সেতু। সেই সঙ্গে অবসান ঘটলো বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কের ৫টি ফেরি পারাপার।

রোববার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১১টা ৫ মিনিটে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পায়রা সেতু উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেতুর দুমকী প্রান্তে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক এমপি, বরিশাল সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার সংসদ সদস্যরা, সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী ও প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর, শেখ হাসিনা সেনা নিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল আবুল কালাম মো. জিয়াউর রহমান, বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল, ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান, পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান, সড়ক বিভাগ বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু হেনা মো. তারেক ইকবালসহ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

পায়রা সেতু ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী এলাকার পায়রা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে সেতুটির দূরত্ব ১৯২ কিলোমিটার এবং বরিশাল নগরী থেকে ২৭ কিলোমিটার। ২০১২ সালের মে মাসে সেতু নির্মাণের প্রকল্পে অনুমোদন দেয়। কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের যৌথ অর্থায়নে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন সেতুটির নির্মাণকাজ করছে। ২০১৩ সালে ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুটি নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা ছিল এবং ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪১৩ দশমিক ২৮ কোটি টাকা। কিন্তু নানান জটিলতায় সর্বশেষ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ১১৮ কোটি।

পায়রা সেতু প্রকল্প পরিচালক আবদুল হালিম জানান, চার লেনবিশিষ্ট সেতুটি নির্মিত হচ্ছে ‘এক্সট্রাডোজড কেবল স্টেইড’ প্রযুক্তিতে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর শাহ আমানত সেতুও এই প্রযুক্তিতে নির্মিত। ১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি কেবল দিয়ে দুই পাশে সংযুক্ত রয়েছে। ২০০ মিটার করে দেশের দীর্ঘতম দুটি স্প্যান বসানো হয়েছে পায়রা সেতুতে। নদীর তলদেশে বসানো হয়েছে ১৩০ মিটার দীর্ঘ পাইল, যা দেশের সর্ববৃহৎ। উভয় পাড়ে সাত কিলোমিটারজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে সংযোগ সড়ক। নদীর মাঝখানে মাত্র একটি পিলার ব্যবহার করা হয়েছে। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক থাকবে। ৩২টি স্প্যানের মূল সেতুটি বিভিন্ন মাপের ৫৫টি টেস্ট পাইলসহ ১০টি পিয়ার, পাইল ও পিয়ার ক্যাপের ওপর নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া ১৬৭টি বক্স গার্ডার সেগমেন্ট রয়েছে এ সেতুতে।

পায়রা সেতুতে ‘ব্রিজ হেলথ মনিটর’ স্থাপিত হয়েছে। যার ফলে বজ্রপাত, ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই যানবাহন চলাচলে সেতুর ভাইব্রেশন সিস্টেমে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে সেই বিষয়ে সংকেত দেবে। এছাড়া সেতুর পিলারের পাশে নিরাপত্তা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। এতে কোনো কিছুর ধাক্কায় সেতুর ক্ষতি ঠেকানো সম্ভব হবে, বাড়বে সেতুর স্থায়িত্ব। এই সেতুর জন্য আলাদা সাবস্টেশনের মাধ্যমে সেতুতে বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে বাতি জ্বলবে। থাকছে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থাও।

সাগরকন্যা কুয়াকাটার পর্যটন সম্ভাবনা মাথায় রেখে সেতুটি নান্দনিক রূপে গড়ে তোলা হয়েছে। বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে নির্মিত সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার খবরে খুশি স্থানীয়রা। কারণ পায়রা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে ঢাকার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের পথ সুগম হবে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা, পায়রা সমুদ্রবন্দর, পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, কোস্টগার্ডের সিজি-বেইজ অগ্রযাত্রা, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর। এক সময় সড়কপথে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা যেতে ১০টি নদীতে ফেরি পারাপার হয়ে যেত হতো। এখনো পদ্মা ও পায়রা এই দুটি নদীতে ফেরি পারাপার হতে হয়। নদী পারাপারে দীর্ঘ সময় লাগার পাশাপাশি যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.