যেসব কারণে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্র তৈরি হলো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন আজ। সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এর উদ্বোধন করেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাসহ বিভিন্ন পণ্য-ভিত্তিক মেলার স্থায়ী ভেন্যু হিসেবে বছরব্যাপী ব্যবহার হবে এই কেন্দ্র।

সূত্র জানায়, ২০ একর জমির ওপর নির্মিত এক্সিবিশন সেন্টারটি নির্মাণ করেছে চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চাইনিজ স্টেট কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। সেন্টারটির নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৭৭৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন সরকারের অনুদান ছিল ৫২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে ২৩১ কোটি এবং রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবি অর্থায়ন করেছে ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। প্রতিবছর এখানেই অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, চীন বাংলাদেশের বড় ব্যবসায়িক অংশীদার। এই সেন্টারের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হলো। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করবে। রফতানিও বাড়াবে বলে আশা করছি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মোট ছয়টি উদ্দেশ্যে সরকার এই প্রদর্শনী কেন্দ্রের নির্মাণ করেছে-

১। বাংলাদেশের বাণিজ্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে দেশি-বিদেশি পণ্য উৎপাদনকারী ও ক্রেতাদের আন্তর্জাতিক মানের একটি কমন প্লাটফর্মে যোগাযোগের সুযোগ করে দেওয়া।

২। প্রতিযোগিতার সুযোগ তৈরি করে পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি ও বৈচিত্র্য আনতে সহায়তা করা।

৩। দেশি-বিদেশি প্রতিযোগী উৎপাদকের পণ্যের মান ও মূল্য সম্পর্কে সরাসরি তুলনার সুযোগ করে দেওয়া।

৪। একই প্লাটফর্মে সারাবছর পণ্যভিত্তিক মেলা ও সাধারণ বাণিজ্য মেলাসহ শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক বিভিন্ন প্রকার আয়োজনের সুযোগ সৃষ্টি করা।

৫। স্থানীয় পণ্যের গুণগত মান ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করা।

৬। আধুনিক কারিগরি সুযোগ বিশিষ্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ সেন্টার তৈরি করে বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক বিজনেস হাব প্রতিষ্ঠা করা।

উল্লেখ্য, পূর্বাচল নতুন শহরে ২০ একর জমির ওপর ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে ২৪ হাজার ৩৭০ বর্গমিটার জায়গায়। এক্সিবিশন হলের আয়তন ১৫ হাজার ৪১৮ বর্গমিটার। স্টল আছে ৮০০টি। দোতলা পার্কিং বিল্ডিংয়ে পার্কিং স্পেস ৭ হাজার ৯১২ বর্গমিটার। ৫০০টি গাড়ি পার্কিং করা যাবে। এ ছাড়া এক্সিবিশন বিল্ডিংয়ের সামনে খোলা জায়গায় আরও এক হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের সুযোগ রয়েছে।

প্রদর্শনী কেন্দ্রে ৪৭৩ আসন বিশিষ্ট একটি মাল্টি ফাংশনাল হল, ৫০ আসনের কনফারেন্স কক্ষ, ৬টি নেগোসিয়েশন মিটিং রুম, ৫০০ আসনের রেস্তোরাঁ, শিশুদের খেলার জায়গা, নামাজের রুম, ২টি অফিস, মেডিক্যাল বুথ, গেস্ট রুম, ১৩৯টি টয়লেট, বিল্ট-ইন পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম, নিজস্ব ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, স্টোর রুম, সিসিটিভি কন্ট্রোল রুম, অটোমেটেড সেন্ট্রাল এসি সিস্টেম, ইনবিল্ট ইন্টারনেট, ওয়াইফাই, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, ইন-বিল্ট পতাকা স্ট্যান্ড এবং ইলেকট্রনিক প্রবেশপথ রয়েছে।

সেন্টারটির নির্মাণকাজ শুরু ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর। কাজ শেষ হয় ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর। ঢাকার শেরেবাংলা নগরের অস্থায়ী মাঠ থেকে পূর্বাচলে নির্মিত সেন্টারটির দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। প্রদর্শনী কেন্দ্রে দৃষ্টিনন্দন ঢেউ খেলানো ছাদের নিচে দুই লাখ ৬৯ হাজার বর্গফুটের দুটি পৃথক প্রদর্শনী হল রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্রে বছরে একবার মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার বাইরেও সারা বছর সোর্সিং ও পণ্য প্রদর্শনী হবে। সে জন্য পাঁচ তারকা হোটেল, নতুন প্রদর্শনী কেন্দ্র, ভূগর্ভস্থ পার্কিং ইত্যাদিও করা হবে। এসব স্থাপনার জন্য ইতোমধ্যে বাড়তি ১৭ একর জমি পাওয়া গেছে।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.