‘বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে কোনো বিরোধ নেই’

আবার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে দেশের পুঁজিবাজার। দুই মাসের টানা উর্ধগতির পর বাজারে মূল্য সংশোধন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আড়াইশ পয়েন্টের বেশি কমেছে। মূলত মূল্য সংশোধনের কারণে শেয়ারের দাম কমলেও একে ঘিরে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে জোরালো গুজব ছিল অর্থবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। আর এর প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে।

তবে দুটি সংস্থা-ই জোরালোভাবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, পুঁজিবাজারসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তারা সমন্বিতভাবে কাজ করছেন।

পুঁজিবাজারের গত কয়েকদিনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১১ অক্টোবর থেকে পুঁজিবাজারে টানা পরপতন চলছে। ওই দিন লেনদেনের শুরুতে ডিএসইএক্সের অবস্থান ছিল ৭ হাজার ৩৬৭ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট। সোমবার (১৮ অক্টোবর) তা কমে ৭ হাজার ৯৭ দশমিক ২৭ পয়েন্ট দাঁড়ায়। মাত্র ছয় কার্যদিবসে সূচকটি  ২৭১ পয়েন্ট বা প্রায় পৌনে ৪ শতাংশ কমেছে। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ৩১৫ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি ডিএসই’র লেনদেন কমে প্রায় তিনমাসের মধ্যে সর্বনিম্ন স্থানে নেমে এসেছে।

পতনের শুরু থেকেই নানা এর কারণ হিসেবে নানা গুজব ছড়াতে থাকে। এর মধ্যে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যকার দ্বন্দ্বের গুজবটিও ছিল। বিশেষ করে সোমবার ডিএসইতে বড় দরপতন হলে ওই গুজবটি নতুন গতি পায়।

মূলত গত ১৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বয় সভায় দুয়েকটি ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মতভিন্নতার খবরকে কেন্দ্র করে এই গুজবের উৎপত্তি। যদিও ওই মতভিন্নতা কখনো-ই বিরোধে রূপ নেয়নি এবং ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলমান আছে, তবু সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠি এটিকে কাজে লাগিয়ে বাজারকে অস্থির করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর তারা নিজেদের স্বার্থে এই ধরনের গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে বলে বাজার বিশ্লেষকদের ধারণা।

যোগাযোগ করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম অর্থসূচককে বলেন, এই ধরনের গুজবের কোনো ভিত্তি নেই। বরং বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময়ই পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য সব ধরনের নীতি-সহায়তা দিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোকে সীমার মধ্যে থেকে যেন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি সমন্বিত ও খুব ঘনিষ্টভাবে পুঁজিবাজার ও অর্থনীতির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম অর্থসূচককে বলেন, বিএসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে এ যাবৎকালের সবচেয়ে ঘনিষ্ট সম্পর্ক এখন। দুটি সংস্থা পুঁজিবাজার ও আর্থিক খাতের উন্নয়নে সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, কিছু সুযোগসন্ধানী মানুষ নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়িয়ে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করে থাকে। এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীসহ সবার সচেতন থাকা উচিত।

বিএসইসি মুখপাত্র বলেন, সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো নিয়মিত বৈঠক করে থাকে, যাতে সমন্বিতভাবে উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে কখকনো কখনো দুয়েকটি ইস্যুতে মতভিন্নতা দেখা দিতেই পারে। ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে পরস্পর পরস্পরের যুক্তিগুলো তুলে ধরে ঐকমত্য ও সমাধানের দিকে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে দুয়েকটি ইস্যুতে মতভিন্নতার যে কথা প্রচার করা হয়, সেগুলো কিন্তু আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের কাছাকাছি চলে এসেছে।

তিনি দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঘনিষ্ট সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরতে গিয়ে উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠেয় বিএসইসির বিনিয়োগ রোড শো’র কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিএসইসির চেয়ারম্যান মহোদয় নিজে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সাথে দেখা করে ওই রোড শোতে অংশ নেওয়ার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি ওই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে রোড শোতে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অর্থসূচক/এমএস/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.