সেপ্টেম্বরেও কমেছে প্রবাসী আয়

করোনা মহামারির এ সময়ে অর্থনীতির সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক সূচকটিও কমতে শুরু করেছে। গত কয়েক মাস ধরেই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে ১৭২ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রবাসী আয়ের এ অঙ্ক গত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২০ সালের মে মাসে দেশে ১৫০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।

আজ রোববার (০৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সদ্যসমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৭২ কোটি ৬৩ লাখ (১.৭২ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা ধরে) যার পরিমাণ ১৪ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার। ফলে এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ।

এদিকে গত তিন মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে কমছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ। গত আগস্ট মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮১ কোটি ডলার। যা তার আগের মাস জুলাইয়ের চেয়ে ৬ কোটি ১৪ লাখ ডলার কম। এছাড়া আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ কোটি ৩৮ লাখ বা প্রায় ৮ শতাংশ কম। এর আগে চলতি বছরের জুলাইয়ে দেশে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে। যা তার আগের মাস জুনের চেয়ে ৬ কোটি ৯৩ লাখ ডলার কম। এছাড়া আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৮ শতাংশ কম।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির সময়ে প্রবাসীরা বিভিন্ন অনিশ্চয়তার কারণে নিজেদের জমানো টাকা দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। অনেকে চাকরি হারিয়ে বা ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ করেও দেশে টাকা পাঠিয়েছেন। ফলে সেসময় রেমিট্যান্স বেড়েছে। এছাড়া করোনাকালীন হুন্ডির প্রবণতা কমে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানোর প্রবণতা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। সব মিলিয়ে সেসময় রেমিট্যান্স বেড়েছিল। এখন করোনার পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। অনেক দেশের ভ্রমণ-যোগাযোগ ও ব্যবসা বাণিজ্য সচল হয়েছে। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে অর্থের চাহিদা বেড়ে গেছে। ফলে বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয় কমছে।

এছাড়া অনেকে দেশে এসে করোনার কারণে আটকা পড়েছেন। আবার অনেক প্রবাসী নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। এসব কারণে রেমিট্যান্স নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। তবে শ্রম রফতানি শুরু হওয়ায় শিগগিরই আবার প্রবাসী আয় ইতিবাচক হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে ৩৬ কোটি ১৪ লাখ ডলার। বিশেষায়িত দুটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৭২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৩২ কোটি ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৭৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

বরাবরের মতো বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে। সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে ৪৬ কোটি মার্কিন ডলার। এছাড়া ডাচ বাংলা ব্যাংকে এসেছে ২০ কোটি ৩৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১৪ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ কোটি ১২ লাখ ডলার এবং জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে আসে। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ শমিক ১০ শতাংশ বেশি। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি বাংলাদেশে।

জানা গেছে, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে আরও ২ টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা পাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন প্রবাসীরা।

অর্থসূচক/এমএস/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.