সাউথ বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আমজাদের পদত্যাগ

শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন পদত্যাগ করেছেন। তার স্থলে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বরের পর্ষদ সভায় ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হবে।

এ বিষয়টি ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ্ উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমজাদ হোসেন পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগপত্রটি পেয়েছি। আইন অনুযায়ী এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তার স্থলে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হবে।

চলতি বছর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নতুন প্রজন্মের ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে ২০১৩ সাল থেকে ২০২১ (সেপ্টেম্বর) টানা নয় বছর দায়িত্ব পালন করেন আমজাদ হোসেন। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি নানা অভিযোগ উঠে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি ব্যাংকটির পর্ষদের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিলেন। তবে পদত্যাগপত্রটি ব্যাংকটির বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) পর কার্যকর হবে। আগামী অক্টোবর মাসে ব্যাংকটির এজিএম অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচন করার জন্য অনুরোধ করেছেন তিনি।

পদত্যাগপত্রে আমজাদ হোসেন উল্লেখ করেন, তিনি নতুন চেয়ারম্যানের কাছে স্বাচ্ছন্দ্যে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে প্রস্তুত রয়েছেন।

এসএম আমজাদ হোসেন এসবিএসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে পদে দায়িত্ব পালনকালে নামে-বেনামে পরিবার ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে নিজ ব্যাংক থেকেই ঋণ নিয়েছেন প্রায় ২৬০ কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নেওয়ারও। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নেওয়া এ ঋণের প্রক্রিয়ায় ছাড়ও পেয়েছেন নজিরবিহীন। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ লঙ্ঘিত হয়েছে ব্যাংক-সংক্রান্ত যাবতীয় আইন ও রীতিনীতি। এতে সহায়তা করেছেন তারই নিয়োগ দেওয়া অনুগত কিছু কর্মকর্তা। পরিশোধের সময় পেরোলেও অনিয়মের মাধ্যমে নেওয়া ঋণের জন্য খেলাপি হিসেবে দেখানো হচ্ছে না তাকে। ব্যাংকের পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এ ঋণ পরিশোধের জন্য বারবার তাগিদ দিলেও তাতে লাভ হয়নি। গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও উঠেছে আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে।

দেশের সরকারি-বেসরকারি অন্য চারটি ব্যাংকে আমজাদ হোসেনের ঋণ রয়েছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি। এসব ঋণের আদায় পরিস্থিতিও সুবিধাজনক নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ ও দুদকের তদন্তেও অনিয়মগুলোর কথা উঠে এসেছে।

ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বিরুদ্ধে হিমায়িত খাদ্য রফতানির কথা বলে বন্ডেড সুবিধায় কাগজ ও অন্যান্য সামগ্রী আমদানি করে তা খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। ২৫০ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে এরই মধ্যে তার মালিকানাধীন লকপুর গ্রুপের চারটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করেছে মোংলা কাস্টম হাউজ। আমজাদ হোসেনের অন্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও প্রায় ৫০০ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ এ মুহূর্তে আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। ঋণ জালিয়াতিসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে গতবছর দুদক থেকে তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়েছিল।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.