ডিআইজি পার্থ গোপাল কারাগারে

ঘুষ গ্রহণ ও অর্থপাচার আইনে করা মামলায় বরখাস্ত সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিকের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ থেকে মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এ বদলির আদেশ দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দুদকের সেগুনবাগিচার প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় পার্থ গোপাল বণিককে। ঘুষ ও দুর্নীতির কয়েক লাখ নগদ টাকা তার বাসায় রয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে এদিন বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয় এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পার্থ গোপাল বণিককে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

গত বছরের ২৪ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পার্থের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। এত বলা হয়, ২০১৪ সালে তিনি ৩১ হাজার ২৫০ টাকা বেতন স্কেলে কারা উপ-মহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তার এ বেতন স্কেলের সঙ্গে এত টাকা উপার্জন অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি তার কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তা উত্তোলন করেননি বা তিনি কখনো এ অর্থ আয়কর বিবরণীতেও প্রদর্শন করেননি, যা দ-বিধির ১৬১ ধারা, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭ (১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫ (২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। গত বছরের ৪ নভেম্বর পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এর পর ১৫ ডিসেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

গত বছর ২ নভেম্বর ও গত ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্টে দুবার পার্থ গোপাল বণিকের জামিন আবেদন খারিজ করেন হাইকোর্ট। সে সময় হাইকোর্ট পৃথক আদেশে প্রথমে ৬ মাসের মধ্যে ও পরে এক বছরের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেন। এ নির্দেশের পরও নির্ধারিত সময়ে মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। এ অবস্থায় পার্থ গোপাল বণিক গত ১৯ জুন জামিন পান। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৫-এর বিচারক ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় তার জামিন মঞ্জুর করেন। জামিন আদেশ নিয়ে তার পরদিনই তিনি জেল থেকে বের হন।

তড়িঘড়ি করে পার্থ গোপাল বণিককে জামিন দেওয়ার ও কারামুক্তির বিষয়টি নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রকাশিত প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন। এ ছাড়া তার জামিন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করে দুদক। আদালত এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে গত ২৮ জুন হাইকোর্ট বিশেষ জজ আদালত ৫-এর বিচারকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেন। সাত কার্যদিবসের মধ্যে কোন যুক্তিতে ওই বিচারক পার্থ গোপালকে জামিন দিয়েছেন তার ব্যাখ্যা চান।

এছাড়া এ জামিনের বিষয়ে চ্যানেল ২৪-এ প্রচারিত প্রতিবেদনের ভিডিও ক্লিপ দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি পার্থ গোপাল বণিকের জামিনের বিরুদ্ধে দুদকের করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়। সে অনুযায়ী ওই জামিনের ব্যাপারে ভুল স্বীকার করে ব্যাখ্যা দাখিল করে ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. ইকবাল হোসেন হাইকোর্টের কাছে ক্ষমা চান। পরে গত ২ সেপ্টেম্বর উপরিউক্ত আদেশ দেন হাইকোর্ট।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.