লাশ হস্তান্তরে ওসির ঘুষ দাবি, স্বজনদের মারধর

বরগুনার বেতাগীতে আমড়া পাড়তে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে মৃতুর ঘটনায় অপমৃত্যুকে খুন বলে দাবি করে লাশ হস্তান্তরে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে মির্জাগঞ্জ থানার ওসি মো. মহিবুল্লাহর বিরুদ্ধে। এছাড়া ওই থানার এসআই সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মৃত ব্যক্তির স্বজনদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

ইতোমধ্যে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ওই ঘটনায় তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকিসহ মামলা দেওয়ার কথা প্রকাশ্যে বলেন এসআই সাইফুল। একপর্যায়ে মৃত ব্যক্তির স্বজন ও পুলিশের মধ্যে লাশ নিয়ে টানাহেঁচড়া হয়। এ ঘটনায় স্বজনদের মধ্য থেকে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এরপর তাদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা।

অভিযোগে জানা যায়, শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় বেতাগীর হোসনাবাদে আবুল বাশার নামে এক (মুদি-মনোহরি) ব্যবসায়ী আমড়া পাড়তে গিয়ে গাছ থেকে পাকা সড়কে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। পরে স্বজনরা নিকটস্থ মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। দায়িত্বরত চিকিৎসক তানভির হাসান তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এরপর শুরু হয় লাশ হস্তান্তরে স্বজনদের সঙ্গে নানা টালবাহানাসহ দুই থানার ওসিদের ফোনে ও মৌখিক কথোপকথন। একপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট থানা বেতাগীর ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন মির্জাগঞ্জ থানার ওসি মো. মহিবুল্লাহকে বলেন, আমি ঘটনাস্থলে তদন্তের জন্য পুলিশ পাঠিয়েছি এবং জানতে পারি ঘটনা সত্য এটি একটি অপমৃত্যু; শতাধিক লোক ও একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য দিয়েছেন। আপনি চাইলে নিঃসন্দেহে ময়নাতদন্তবিহীন স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করতে পারেন। তবে ওসি মহিবুল্লাহ এ কথা এড়িয়ে গিয়ে বলেন, লাশ হস্তান্তরে আইনি জটিলতা আছে।

খবর পেয়ে তথ্য নিতে ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে উপস্থিত হন একাধিক সংবাদকর্মী। সংবাদকর্মীদের সামনেও স্বজনদের ওসি মহিবুল্লাহ প্রথমে বলেন কিছু আইনি জটিলতা আছে, তবে আমরা দেখছি আপনারা থানায় আসুন।

কিছুক্ষণ পরে স্বজনদের কাছ থেকে শোনা যায় লাশ নিতে হলে ২০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানিয়েছেন মির্জাগঞ্জ থানার ওসি মহিবুল্লাহ। সংবাদকর্মীরা টাকার বিষয়টি শোনায় ১০ মিনিট যেতে না যেতেই তিনি আবার স্বজনদের ডাকেন এবং বলেন লাশের শরীরে কোনো আঘাত না থাকলেও মাথার আঘাত দেখে মনে হচ্ছে এটি খুন, অপমৃত্যু নয়। সুতরাং লাশ ময়নাতদন্তে পাঠাতেই হবে, আমি ডিআইজি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি তিনিও বিষয়টি জানেন।

ওসির সামনেই নিহতের স্ত্রী বলেন, আমরা টাকা দিতে পারব না বলে লাশ নিতে পারব না? লাশ মর্গে নিবেন কেন? আমার স্বামীর মৃত্যুর সময় একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন, বেতাগী থানার পুলিশও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। একটা দুর্ঘটনাকে আপনারা পুলিশরা খুন বলতে পারেন না। আমার স্বামীর লাশ কাটাছেঁড়া করতে দিব না। এই বলে কেঁদে ফেলেন মৃত আবুল বাশারের দুই স্ত্রী ও স্বজনরা।

কিছুক্ষণ পর সাইফুল ইসলাম নামের এক এসআই তার স্বামীর লাশ ময়নাতদন্তে নেওয়ার জন্য টানাহেঁচড়া শুরু করেন। তারা বাধা দিলে মারধর শুরু করেন সাইফুল এবং সংবাদকর্মীদের সামনেই নারীদের গায়ে হাত তোলেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে শতাধিক স্বজন ডাকচিৎকার দিলে লাশ মেঝেতে ফেলে দিয়ে শুরু করেন এলোপাতাড়ি মারধর, আটক করেন তিন স্বজনকে।

মৃত আবুল বাশারের দুই স্ত্রী, ভাইসহ স্বজনরা গণমাধ্যমকে বলেন, আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পরপরই বাশারের মৃত্যু হয়। তারপরই শুরু হয় পুলিশদের নানা ধরনের নাটক।

এ ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে এসআই সাইফুল বলেন, যা হইছে তা তো দেখেছেনই, যা পারেন কইরেন, আমি আপনাদের দেখে নেব! মামলা গুনেও শেষ করতে পারবেন না।

বেতাগী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানিয়েছি এটি নিঃসন্দেহে একটি অপমৃত্যু। তারপরও কেন মির্জাগঞ্জ থানা পুলিশ লাশ হস্তান্তরে গড়িমসি করেছে, কী আইন জটিলতা ছিল এ ব্যাপারে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই।

তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে মির্জাগঞ্জ থানার ওসি মো. মহিবুল্লাহ বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনজনকে আটক করা হয়েছিল, পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। লিখিত রেখে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরে ফোনালাপে আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চা খেতে আসেন, ফোনে আর কী বলব।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.