হাসেম ফুডসের কারখানায় মিলল মাথার খুলি, চুল ও হাড়

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুই মাস পর মাথার খুলি, চুল ও দুটি হাড় উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ তিন শ্রমিকের স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ দিনব্যাপী তল্লাশি চালিয়ে তিনটি মানব দেহের হাড়ের অংশ বিশেষ পেয়েছে। হাড়গুলোর ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় যৌথভাবে বিকেল থেকে তল্লাশী চালিয়ে রাতে কারখানার পুড়ে যাওয়া মালামালের স্তুপের নিচ থেকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মী ও সিআইডির সদস্যরা এগুলো উদ্ধার করে। নিখোঁজ তিন শ্রমিক হলেন- লাবনী, সাজ্জাদ ও মহিউদ্দিন।

নারায়ণগঞ্জ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এর বিশেষ পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘৪৫ জনের মরদেহ হস্তান্তর করার পর নিখোঁজ তিন শ্রমিকের পরিবারের সদস্যরা গত সপ্তাহে উদ্ধারের আবেদন জানান। তাদের ধারণা ছিল, যে ৪৫ জনের মরদেহ হস্তান্তর হয়েছে সেখানে তাদের স্বজনের মরদেহ থাকবে। কিন্তু সেখানে না থাকায় তারা এ আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিকেলে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ও সিআইডির একটি টিম যৌথভাবে তল্লাশী চালিয়ে কারখানার জঞ্জালের স্তুপের নিচ থেকে মাথার খুলি, চুল ও দুটি হাড় উদ্ধার করে। এর মধ্যে তৃতীয় তলা থেকে মাথার খুলি ও চুল পাওয়া গেছে। আর চতুর্থ তলা থেকে দুটি হাড় পাওয়া গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এগুলো এক ব্যক্তির নাকি একাধিক ব্যক্তির, এমনকি নারী নাকি পুরুষের কিছুই বলা যাচ্ছে না। উদ্ধারকৃত দেহবিশেষ ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ডিএনএ রিপোর্টের পরই বিস্তারিত বলা যাবে। ৪৫ জনের ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ায় তাদের স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু এখনও বাকি তিনজনের ডিএনএ রিপোর্ট পাইনি। তাই হস্তান্তর করা হয়নি। আশা করছি খুব শীঘ্রই পেয়ে যাবো। তখন তাদের স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। এছাড়া মামলার তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই বিকেলে উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানার ১৪ নম্বর গুদামের ছয় তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক ভবন থেকে লাফিয়ে পরে তিনজন মারা যান এবং ১০ জন আহত হন। প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরদিন শুক্রবার বিকেলে আগুন নিভিয়ে ফেলার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ৪৮ জনের পুড়ে যাওয়া মরদেহ উদ্ধার করে। ঘটনার পর ৪ আগস্ট ডিএনএ পরীক্ষা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে প্রথমে ২৬ জন ও পরবর্তীতে ২১ জনের পোড়া মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানাধীন ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে কারখানার মালিক আবুল হাসেমসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে নিরাপত্তা না থাকাসহ বিভিন্ন অবহেলার অভিযোগ এনে রূপগঞ্জ থানায় মামলা করেন। পরবর্তীতে এ মামলাটির তদন্তভার সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.