২০ বছরের দীর্ঘতম যুদ্ধের অবসান

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র এবং মার্কিন সেনা সদর দপ্তর পেন্টাগনে হামলার ঘটনায় আফগানিস্তানে হামলা চালায় আমেরিকা। শুরু হয় আফগান জনগণের নতুন করে অনিশ্চয়তার পথ চলা। ২০ বছর পর কাবুল ছাড়ল মার্কিন সেনা। শেষ হলো ২০ বছরের যুদ্ধ।

সোমবার (৩০ আগস্ট) মধ্যরাতে মার্কিন সেনারা আফগানিস্তানের মাটি ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই কাবুল বিমানবন্দরে ঢুকে পড়ে তালেবান। বারোটা বাজার এক মিনিট আগে শেষ মার্কিন বিমান সমস্ত সেনাকে নিয়ে আফগানিস্তান ছেড়ে উড়ে যায়। শেষ হলো ২০ বছরের যুদ্ধ। তালেবান মুখপাত্র জানিয়েছেন, কাবুল বিমানবন্দর এখন তাদের হাতে। এতদিনে আফগানিস্তান সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন হলো।

মার্কিন সেনার সেন্ট্রাল কম্যান্ড কম্যান্ডার জেনারেল ফ্রাঙ্ক ম্যাকেঞ্জি এর কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি বিবৃতি দেন। সেখানে বলা হয়, শেষ মার্কিন বিমান আফগানিস্তানের মাটি ছেড়েছে। এর মাধ্যমে আফগানিস্তানে অ্যামেরিকার মিলিটারি মিশন শেষ হলো। মার্কিন নাগরিকদের দেশে ফেরানোর যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তারও সমাপ্তি ঘটল। মার্কিন এবং যৌথবাহিনীর সেনা সব মিলিয়ে গত দুই সপ্তাহে অন্তত এক লাখ ২০ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে আফগানিস্তান থেকে অন্য দেশে পাঠিয়েছে। তবে সকলকে উদ্ধার করা যায়নি বলেও স্পষ্ট করে দিয়েছেন ম্যাকেঞ্জি।

ম্যাকেঞ্জির বিবৃতির কিছুক্ষণের মধ্যেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন আরো একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। সেখানে বলা হয়, দুইশর কম কিন্তু একশর বেশি মার্কিন নাগরিককে আফগানিস্তান থেকে উদ্ধার করা যায়নি। তারা আফগানিস্তান ছাড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে মার্ক্নি সেনা তাদের উদ্ধার করতে পারেনি।

শেষ মার্কিন বিমান কাবুল বিমানবন্দর ছাড়তেই সেখানে ঢুকে পড়ে তালেবান যোদ্ধারা। শুরু হয় উৎসব। গোটা কাবুল জুড়েই আকাশে গুলি ছোড়ার শব্দ শোনা যায়। কাবুল বিমানবন্দরের ভিতরেও তারা শূন্যে গুলি চালিয়ে উৎসব করে। তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘মার্কিন সেনা কাবুল বিমানবন্দর ছেড়েছে। আমাদের দেশ এতদিনে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পেল।’

ক্ষমতায় আসার কিছুদিনের মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছিলেন, ৩১ অগাস্টের মধ্যে আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে সমস্ত সেনা সরিয়ে নেবে। যদিও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরো আগেই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলেন।

এরই মধ্যে ধীরে ধীরে গোটা আফগানিস্তানের দখল নেয় তালেবান। কাবুল বিমানবন্দর কেবল মার্কিন সেনার হাতে ছিল। গত দুইদিন কাবুল বিমানবন্দরেও নানা ঘটনা ঘটেছে। আইএস-এর ঘটানো বিস্ফোরণে একাধিক মার্কিন সেনাসহ দেড় শতাধিক মৃত্যু হয়েছে। ড্রোনের সাহায্যে গাড়িবোমা ধ্বংস করেছে মার্কিন সেনা। যার জেরে সাধারণ মানুষ এবং শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ভোরে কাবুল বিমানবন্দর লক্ষ্য করে একাধিক রকেট ছুড়েছে আইএস। তার মধ্যেই শেষ বিমানে সমস্ত মার্কিন সেনা নিয়ে আফগানিস্তান ছাড়ে আমেরিকা। সূত্র: ডিডাব্লিউ, রয়টার্স, এপি, এএফপি

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.